নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বড় বাধা। এই অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। রাতে কোর্ট বসিয়ে বিচারকদের সাজা দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। সরকারের পছন্দমতো আদেশ না দেওয়ার কারণে বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। জামিন দেওয়া না দেওয়ার কারণে বদলি করা হয়েছে। অনেক বিচারককে দেখেছি চোখের পানি ফেলতে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে এসব কথা বলেন রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ রুলের ওপর শুনানি হয়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
রিটকারী পক্ষের শুনানি শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনতে চান আদালত। তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, অ্যাটর্নি জেনারেল দেশের বাইরে রয়েছেন। পরে আদালত শুনানি মুলতবি করেন।
শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আগে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ক্ষমতা ছিল। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি রাষ্ট্রপতির হাতে নেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের বিধান রাখা হয়।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার-কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে।
শিশির মনির শুনানিতে বলেন, ‘বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি করতে সরকার আপিল বিভাগে অন্তত ৫৮ বার সময় নিয়েছিল। আর শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করলেও তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তাতে স্বাক্ষর করেননি। পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে তা অনুমোদন করানো হয়। আমরা চাই রাষ্ট্রপতির নয়, সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে। তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।’
এর আগে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ১০ আইনজীবী। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছরের ২৭ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।