হোম > ছাপা সংস্করণ

এক শয্যায় চার শিশুর চিকিৎসা

শাহীন রহমান, পাবনা

আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ২৯

অসুস্থ নাতিকে চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে এসে আইয়ুব আলীর ভোগান্তি আরও বেড়েছে। গতকাল রোববার ওই হাসপাতাল গিয়ে দেখা মিলল তাঁর। সদর উপজেলার পূর্ব নারগুন গ্রাম থেকে আসা আইয়ুব জানালেন, শয্যা খালি না থাকায় নাতিকে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা ধরে শিশু ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করছেন। কখন শয্যা খালি হবে, কখন নাতিকে চিকিৎসককে দেখানোর সুযোগ পাবেন এখনো তা জানেন না আইয়ুব। তাঁর মতো অনিশ্চয়তা নিয়ে আরও অনেক শিশু রোগীর অভিভাবক অপেক্ষা করছেন ওয়ার্ডের বাইরে।

শিশু ওয়ার্ডের ভেতরের চিত্রটা আরও ভয়াবহ। রোগী আর স্বজনদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁইটুকুও নেই। শয্যার তুলনায় রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিন-চারজন শিশুকে এক বেডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত মানুষের চাপে এবং টয়লেটগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধে ওয়ার্ডের ভেতরে টেকা দায়। ফ্যান নষ্ট থাকায় তীব্র গরমে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। হাতপাখা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। গরমে টিকতে না পেরে কেউ কেউ শিশুকে কোলে নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতাল চত্বরের গাছতলায় ঠাঁই নিয়েছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল জানান, ফ্যান ঠিক করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হলেও তারা বিষয়টি গ্রাহ্য করছে না। এ প্রসঙ্গে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাজিদার রহমান বলেন, কাজ শুরু হয়েছে। ফ্যান লাগিয়ে দেওয়া হবে।

ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। এক রোগীর স্বজন মহসিন আলী জানালেন, শয্যার পাশাপাশি অন্যান্য সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিশুদের অক্সিজেন দেওয়ার যন্ত্র আছে মাত্র দুটি। এর মধ্যে একটি নষ্ট থাকায় একটিমাত্র যন্ত্র দিয়ে কাজ চলছে। গুরুতর শিশুদেরও অক্সিজেন নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নার্সদের কাছ থেকেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। উল্টো রোগীর স্বজনদের হয়রানি করা হচ্ছে।

শিশু ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, দু-একজন নার্স নিয়ে শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা কী করে দেবেন!

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হঠাৎ করে স্থানীয় শিশুদের মধ্যে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতালে তাই রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। বহির্বিভাগেও রোগীর উপচে পড়া ভিড়। যে গতিতে রোগী বাড়ছে তা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরও উদ্বিগ্ন। এর মধ্যেই গত দেড় মাসে ৩৮০৯ শিশু চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় মাসে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণেই এত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শাহজাহান নেওয়াজ বলছেন, মৌসুম বদলের সময় গরম-ঠান্ডার কারণে শিশুরা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই রোগীর চাপ বেড়েছে। রোগী ভর্তির হার অনুযায়ী মৃত্যুর হার অনেক কম। যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই অপরিণত ও কম ওজনের নবজাতক।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে আসা সুমন আলীর অভিযোগ, রোগীদের ঠিকভাবে খাবার দেওয়া হয় না। ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হয়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর ডা. শাহজাহান দাবি করেছেন, মূল ওষুধগুলো হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে।

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

সেকশন