রানা আব্বাস, নিউইয়র্ক থেকে
লংল্যান্ডের বিশাল আইজেন হাওয়ার পার্ক পেরিয়ে নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢুকতে ঢুকতে আফতাব আহমেদের কথাই মনে পড়ল। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই মারকুটে ওপেনার তিন বছর হলো যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। এখানে মাইনর লিগে খেলেন, একটি দলের সঙ্গে কোচ হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নিউইয়র্কের এই বিশ্বকাপ ভেন্যুর অর্ধেকও তৈরি হয়নি। আফতাব তখন বলছিলেন, ‘চিন্তা করবেন না, আমেরিকা রাতকে দিন বানাতে পারে, দিনকে রাত! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে দেখবেন সব তৈরি।’ কাল নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে আফতাবের কথা সত্যি মনে হলো! কে বলবে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে একটা পার্কের খোলা মাঠকে বিশাল স্টেডিয়ামে রূপ দেওয়া হয়েছে! বাংলাদেশ-ভারতের এই গা গরমের ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়ে গেল নিউইয়র্কের আলোচিত স্টেডিয়ামটির।
প্রথম ম্যাচে উইকেট কিছুটা মন্থর হলেও বল ঠিকঠাক ব্যাটে আসছিল। ভারত প্রথমে ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়ার দিকেই যাচ্ছিল, আর আউটফিল্ডে টুকটাক সমস্যা থাকলেও স্টেডিয়ামের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ সামান্য।
আপাতত সব অস্থায়ী কাঠামো দিয়ে তৈরি হলেও আইসিসি আশাবাদী, স্টেডিয়ামটি স্থায়ীভাবে ক্রিকেটের জন্য থাকবে। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেসের অলিম্পিক আর যুক্তরাষ্ট্রে উপমহাদেশের বিপুল প্রবাসীর কথা ভাবনায় রেখে আইসিসি মার্কিন বাজারটা ধরতে চাইছে। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই আছে। কালকের প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতেই বাংলাদেশ-ভারতের দর্শকদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। এই আগ্রহ টুর্নামেন্টে আরও বাড়বে বৈ কমবে না। নিউইয়র্কেও হতে যাওয়া ৯ জুন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে দুই দলের সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। একই ভেন্যুতে পরের দিন বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিটও প্রায় শেষ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এই ম্যাচের টিকিট এখন সোনার হরিণ। কালোবাজারে টিকিটের দাম আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ডলারে উঠে গেছে! তবু নাকি এত দামি টিকিট কেনার দর্শকের অভাব নেই নিউইয়র্কে। বেসবল-বাস্কেটবলের দেশে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার ‘দায়িত্ব’ যেন প্রবাসীদেরই। এখনো খেলাটা নিয়ে সেভাবে আগ্রহ তৈরি হয়নি মার্কিনদের।
আয়োজকেরা বিশ্বকাপের প্রচারে কমতি রাখছে না। পরশু যেমন ম্যানহাটানে লেজার শো করেছে, গতকাল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ফ্যান জোনে হলো আরেকটি অনুষ্ঠান। টাইমস স্কয়ারের বিলবোর্ডে বিশ্বকাপ প্রচারের ট্যাগলাইনটাও দারুণ, ‘ক্রিকেট ইজ হিয়ার’। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট প্রসারের এই চেষ্টা কতটা সফল হয়, সেটা বোঝা যাবে টুর্নামেন্ট শেষে, যেটির আনুষ্ঠানিক শুরু আজই। ডালাসে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি কানাডা।