সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং-তাণ্ডব দেখা গিয়েছিল। সেদিনের ইনিংস বৃথা গেলেও পরশু চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ১৮ বলে ৪৮* রানের ঝোড়ো ইনিংস দলকেই শুধু জেতায়নি, রিশাদ হোসেন নিজেকে অন্যভাবে চেনানোর সুযোগ পেয়েছেন। তাঁকে দিয়ে এক লেগ স্পিনারের হাপিত্যেশ দূর করার চেষ্টায় আছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যদি লোয়ার অর্ডারে নিয়মিত তাঁর ব্যাটিং-সেবাও মেলে, বড় উপকৃত হবে বাংলাদেশ দল। সাদা বলের সিরিজ শেষে কাল ঢাকায় ফেরা রিশাদ কথা বললেন তাঁর সাম্প্রতিক সাফল্য নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস।
প্রশ্ন: শেষ ওয়ানডেতে মেরুন জ্যাকেট কে পেলেন, আপনিই কি?
রিশাদ হোসেন: না, এ ম্যাচে তাসকিন ভাই পেয়েছেন মেরুন জ্যাকেট। (বোলিংয়ে) তিনি যে সুন্দর একটা শুরু এনে দিয়েছিলেন আমাদের, সে কারণে তিনি পেয়েছেন।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই দুই সিরিজে আপনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?
রিশাদ: (একটু চুপ থেকে) সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী? দেশকে কিছু দিতে পেরেছি, এটাই অনেক ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: আপনার ব্যাটিং-সামর্থ্য ভালোভাবেই দেখা গেল দুটি সিরিজে। এ সাহসী ব্যাটিং আপনার সহজাত নাকি বিশেষ কাজ করে রপ্ত করেছেন?
রিশাদ: আমি চেষ্টা করি উইকেটে গিয়েই মেরে খেলতে। আসলে মেরে খেলতে পছন্দ করি। এদিক থেকে একটু সহায়তা হয়েছে।
প্রশ্ন: যে পজিশনে ব্যাটিং করেন, হাতে খুব একটা বল থাকে না। তবু অনেকে এই পজিশনেও এক-দুটি বল অন্তত দেখেন। বোলারের পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিতেই কি গিয়েই আক্রমণের ভাবনা?
রিশাদ: আমি নিজেও বোলার। ব্যাটার যখন এভাবে আক্রমণ করে বোলারের মাথায় কী কাজ করে, সেটা আমি বেশ বুঝতে পারি। এ দিক চিন্তা করি আক্রমণ করতে চাই। শুরুতেই যেন বোলাররা চাপে থাকে।
প্রশ্ন: এটা ঝুঁকিরও, তাই না?
রিশাদ: ঝুঁকি ছাড়া জীবনে কোনো কিছু হয় বলুন? ঝুঁকি নিলেই সুযোগ বাড়ে।
প্রশ্ন: ঝড় তোলা ব্যাটিং, লেগ স্পিন বোলিং আর ফিল্ডিং তো আছেই। সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে পরিপূর্ণ প্যাকেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য আপনার?
রিশাদ: এখনো অত বড় কিছু ভাবি না। আমার বিশ্বাস আছে, চেষ্টা করব সামনে আরও ভালো কিছু দেওয়ার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনারের হাপিত্যেশ অনেক দিনের। আপনাকে নিয়ে কি তাহলে বাংলাদেশ আশাবাদী হতে পারে?
রিশাদ: অবশ্যই আমার ওপর আস্থা রাখলে চেষ্টা করব শতভাগ দিয়ে আস্থার প্রতিদান দিতে। সবার মুখে হাসি ফোটাতে। এ ছাড়া আমার আর কী করার আছে!
প্রশ্ন: সাদা বলের সিরিজ শেষে ঢাকায় ফেরার আগে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বিশেষ কোনো বার্তা দিয়েছেন আপনাকে?
রিশাদ: কোচ বলছিলেন, তুমি এমনই। তোমাকে এভাবেই খেলা উচিত। তুমি নিজেকে চেনো, আরও ভালো কিছু করতে পারবে।
প্রশ্ন: জুনে বিশ্বকাপের আগে আরও আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এবারও ভালো প্রস্তুতি নিয়েই যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে।
রিশাদ: অবশ্যই, এ ম্যাচগুলো সহায়তা তো করবেই। বিশ্বকাপের আগে এ ম্যাচগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করব নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে খেলার।
প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব কম সুযোগ মেলে আপনার। অনেকে দুর্ভাগা ভাবেন আপনাকে। হাথুরুসিংহে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বলছিলেন, এটা ভাগ্যের বিষয় নয়, দলে নেওয়ার বিষয়।
রিশাদ: এটা ঠিকই, দুর্ভাগার কোনো বিষয় নয়। আমাদের সংস্কৃতি বা রীতি হয়ে গেছে এ কারণে হয়তো এমন...এটা আমাদেরই বদলাতে হবে যে না আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আমরাও পারব।
প্রশ্ন: সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে চেনাচ্ছেন। নিশ্চয়ই টেস্ট খেলারও স্বপ্ন দেখেন?
রিশাদ: অবশ্যই, অবশ্যই। আপাতত যেহেতু সাদা বলের ক্রিকেট বেশি, লাল বল নিয়ে চিন্তা কম করছি। সামনে আসুক, দেখা যাবে ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্ন: ব্যাটিং অর্ডারে কি নিজের কোনো পছন্দের পজিশন আছে?
রিশাদ: দল যেখানে মনে করে, যেখানে খেলালে জিততে পারবে, আমি সেখানেই খেলতে স্বচ্ছন্দবোধ করি। আমার নির্দিষ্ট কোনো পছন্দ নেই যে ওপরে
খেলতে হবে কিংবা নিচে খেলতে হবে। দলের স্বার্থে আমি সব জায়গায় খেলতে পছন্দ করি।