হোম > ছাপা সংস্করণ

চাকরি বাঁচাতে আখ চাষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও

আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ১৬

একদিকে অব্যাহত লোকসান, অন্যদিকে আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাঁচামালের অপ্রতুলতা। সব মিলিয়ে নানামুখী সংকটে সঙিন ঠাকুরগাঁও সুগার মিল লিমিটেড। এর আগে এ ধরনের সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেশ কটি চিনিকল। সেই শঙ্কায় ধুঁকছে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলও। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রাখতে বিস্ময়কর এক উদ্যোগ নিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। কাঁচামালের সংকট কাটাতে কর্মীদের দিয়েই আখ চাষ করানো হচ্ছে। চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমি লিজ নিয়েও আখ চাষ করছেন অনেকে।

তেমনি একজন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী কৃষ্ণ সরকার। সুগার মিলের তিন একর জমি লিজ নিয়ে আখ চাষ করছেন তিনি। আজকের পত্রিকাকে কৃষ্ণ বলেন, ‘চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আখ চাষ করছি। কষ্ট হয়, তবু চাষ করছি। ৩০ হাজার টাকা দরে তিন একর জমি লিজ নিয়ে চাষ করতে হচ্ছে।’

কর্মচারীদের আখ চাষে বাধ্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াৎ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাদের জমি আছে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে।’ জমি লিজ নিয়ে আখ চাষে বাধ্য করা হচ্ছে নাকি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিলের জন্য তো একটি দায়বদ্ধতা সবার থাকে। মিলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে তাই তাদের বাধ্য করা হচ্ছে।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, লাভ না হওয়ায় কৃষকেরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। মিল কর্তৃপক্ষও সেভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্মীদের আখ চাষে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলার ৮ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চাষ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১০০ একর জমিতে। এর মধ্যে ৩০০ একরে চাষ করেছেন মিলের কর্মীরাই।

সদর উপজেলা কৌঠা পাড়ার প্রবীণ চাষি আব্দুস ছামাদ বলেন, আখ চাষ করে এখন আর লাভ হচ্ছে না। চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে যে নগদ ঋণ দেওয়া হতো, তাও বন্ধ। আখের বদলে সবজি, আলু, ভুট্টা চাষ করে লাভ বেশি হচ্ছে। তাই আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কৃষকেরা।

এ প্রসঙ্গে সুগার মিলের ইক্ষু বিভাগীয় প্রধান ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আবু রায়হান বলেন, আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। অল্প সময়ে বেশি ফলনে মনোযোগী হচ্ছেন কৃষকেরা। আবার সময়মতো আখের মূল্য না পাওয়ার কারণেও আগ্রহ কমছে।

আখের সংকটের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব। যন্ত্রপাতির অভাবে ঠিকভাবে আখ মাড়াই করতে না পারায় চিনির উৎপাদন খরচও বেড়েই চলেছে। মিলের ব্যবস্থাপক (কারখানা) মোমিন হোসেন জানান, বার্ষিক উৎপাদনের ক্ষমতা ১৫ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।

চলতি মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৫২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ মাড়াই ক্ষমতার মাত্র ৪০ ভাগ উৎপাদন হয়েছে।

মিলের হিসাবরক্ষক বিভাগের কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, উৎপাদন কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদ, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচ পড়ছে ২০৬ টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মিলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো লাভের মুখ দেখেনি, উল্টো লোকসান হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। মিলের হিসাবরক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিবছর মিলটিকে ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ ৪৬ কোটি টাকা গুনতে হয়। এ বছর সম্ভাব্য লোকসানের পরিমাণ ৭৬ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংকট কাটাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ২০১৩ সালে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সবার আগে মিলটিকে লাভজনক করতে হবে। এ জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। তাহলে লোকসান কমবে। কৃষকদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

সেকশন