হোম > জাতীয়

সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মী বাড়ছে, আয় কমছে

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা

কর্মী ভিসায় গত ৩ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৩৩ লাখ বাংলাদেশি। এ সময়ে শুধু সৌদি আরবেই গেছেন প্রায় ১৭ লাখ, যা মোট কর্মী রপ্তানির অর্ধেকের বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশে বাংলাদেশ সর্বাধিক কর্মী পাঠালেও সেখান থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে উল্টো ধারাবাহিকভাবে কমছে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সৌদি আরবে কর্মীদের বড় একটি অংশই গেছে ফ্রি ভিসায়। যাঁরা ফ্রি ভিসায় যাচ্ছেন, তাঁদের কাজের কোনো চুক্তি নেই, কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তাও নেই। কাজ তাঁদের জোগাড় করে নিতে হবে। বেশি বেশি মানুষ যাওয়ায় আগের মতো এখন কাজ নেই। ওখানে যাঁরা যান, তাঁরা সপ্তাহে এক-দুই দিন কাজ করতে পারেন। বাকি দিন তাঁদের বসে থাকতে হয়। আবার যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে কাজ করছেন, তাঁরাও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফলে দেশে পাঠানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থের জোগান দিতে পারছেন না। যাঁদের সন্তোষজনক আয় আছে, তাঁদের বড় একটি অংশ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাচ্ছে না। এসব কারণে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমছে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ছাড়পত্র নিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে গেছেন। এর আগে ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন, ২০২২ সালে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন, ২০২১ সালে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন এবং ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ জন কর্মী দেশটিতে যান। 

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সৌদি আরব থেকে মাত্র ১৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশটি থেকে। এতে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। 

এ প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের কো-অর্ডিনেটর ড. মো. জালাল উদ্দিন শিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন কর্মী ফ্রি ভিসায় গিয়ে কীভাবে রেমিট্যান্স পাঠাবেন? কারণ, তাঁরা যা আয় করেন, তার একটা অংশ নিজের জন্য খরচ করতে হয়, একটা অংশ জমিয়ে রাখতে হয় কফিলকে দেওয়ার জন্য। না হলে কফিল তার চুক্তি নবায়ন করবে না। নবায়ন না করলে সেই শ্রমিক সেখানে থাকতে পারবেন না। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে তাঁরা দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না। কফিলকে দেওয়া এই টাকার অঙ্কটাও কম নয়। দুই হাজার থেকে তিন হাজার রিয়াল দিতে হয় এ জন্য।

জানা গেছে, সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি আছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে যাঁরা গেছেন, তাঁরা মূলত নির্মাণশ্রমিক, প্ল্যান্টেশন, কৃষি, সার্ভিস বা উৎপাদন খাতে কাজ করেন ৷ তাঁদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এ কারণে মজুরির দিক থেকেও তাঁরা বেশ পিছিয়ে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ২০১৯ সালের তথ্যমতে, একজন বাংলাদেশি কর্মী প্রতি মাসে যেখানে গড়ে ২০৩ ডলার দেশে পাঠাতে পারেন, সেখানে একজন ফিলিপিনো পাঠান ৫৪৬ ডলার।

অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ও রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশিদের অভিবাসন ব্যয় ভারত, শ্রীলঙ্কা বা যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। একজন বাংলাদেশিকে অভিবাসনের সময় ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। জমি বিক্রি বা ঋণ নিয়ে এ টাকা জোগাড় করেন তাঁরা। ফলে সৌদিতে যাওয়ার পরই তাঁদের মাথায় একটা বিষয় কাজ করে; তা হলো ব্যাংকে টাকা পাঠালে ৩ টাকা কম পাবেন আর হুন্ডি করে পাঠালে ৩ টাকা বেশি পাবেন। এ কারণে হুন্ডির দিকে ঝোঁকেন তাঁরা। 

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পৃথিবীর আর কোনো দেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ার খরচ এত বেশি নয়। সৌদি আরবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মী পাঠানো হচ্ছে। অভিবাসন খরচ না কমিয়ে অনেক বেশি লোক গেলে বাকিদেরও বেতন কমে। গত কয়েক বছরে যাঁরা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগ কম বেতনে কাজ করছেন। অধিকাংশ কর্মী দৈনিক ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও মাস শেষে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকাও দেশে পাঠাতে পারছেন না। আবার অনেক কর্মী আনডকুমেন্টেড (অবৈধভাবে) অবস্থায় আছেন। তাঁরা চাইলেও বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে পারেন না।

শুধু কর্মী হিসেবেই নয়, ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবেও সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশি আছেন। সেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও অনেক বাংলাদেশি কর্মী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে বিদেশিদের চাকরি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধি জারি করেছে সৌদি সরকার। এতে আগের মতো আয় নেই বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের। ফলে তাঁরাও কর্মীদের বেশি বেতন দিতে পারছেন না।

যেভাবে ইতিহাস হলো আসাদের রক্তভেজা শার্ট

জুলাই–আগস্টের গণহত্যা: চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে গোয়েন লুইসের বৈঠক

সোমবার সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

শাপলা-শাহবাগ ফেরত আনার চেষ্টা হচ্ছে: মাহফুজ আলম

অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন: সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারে ব্রিটিশ আইনজীবীর পরামর্শ নেয় হাসিনা সরকার

সাবেক মন্ত্রী নওফেল ও বিপুর স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা কারা, তালিকা করতে কমিশন গঠন চেয়ে রিট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পুতুলকে অপসারণে দুদকের তৎপরতা

ওপারের কেউ অবৈধভাবে এপারে আসতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গবেষণায় শিক্ষক-কর্মচারীরা পাবেন আর্থিক সহায়তা, নীতিমালা জারি

সেকশন