উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক উন্মেষ বাস্তবায়ন করতে এক দল লবিস্টের ইশারায় হঠাৎ বাংলাদেশের সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
আজ মঙ্গলবার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, এ সিদ্ধান্ত অযাচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। নিরাপদ বিনিয়োগের নিশ্চয়তা, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণেই এই সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করা সহজ হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এই মতবাদ নিয়ে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে কাজ করে। এই নীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর ও পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক আইজিপিসহ সাত কর্মকর্তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্য উদ্বিগ্ন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পুলিশের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বেনজীর আহমেদ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশ পুলিশকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের সব ধরনের অপেশাদার আচরণরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাকালে বর্তমান আইজিপির নেতৃত্বে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারি, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। এ দায়িত্ব পালনকালে সর্বাধিক পুলিশ সদস্য মানবতার সেবায় জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। বর্তমান আইজিপির নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পুলিশ এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ মানবিক পুলিশ হিসেবে ভূমিকা রাখে।
মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনাকারী বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকে সদস্যরাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের প্রতি অবিচল আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পুলিশ দেশের যেকোনো প্রয়োজন ও সংকটে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ। আইজিপির নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণে যখন বাংলাদেশ পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, তখন এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের। তাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আহ্বান করা হচ্ছে।’
আইজিপির পক্ষে ফেসবুকে সরব পুলিশ সদস্যরা
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের পক্ষ নিয়ে পুলিশ সদস্যরা প্রশংসাসূচক বাক্য যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট শেয়ার করতে শুরু করেছেন। এসব পোস্টে লেখা রয়েছে ‘আওয়ার আইকন আওয়ার প্রাইড’। বলা হচ্ছে, আইজিপি দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ এক সন্তান। মাদক ও জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার রূপকার তিনি।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইজিপির পক্ষে পুলিশ সদস্যেরা পোস্ট দিতে শুরু করেন। পুলিশ সদস্যদের শেয়ার করা একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ওয়ান অব আওয়ার গ্রেটেস্ট সন অব সয়েল’ (মাতৃভূমির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে অন্যতম সন্তান)। তার নিচে লেখা, ‘দ্য কমান্ডার বিহাইন্ড সাসটেইনেবল সিকিউরিটি’ (টেকসই নিরাপত্তার অধিনায়ক)। এ ছাড়া ছবিসহ একটি পোস্টে পুলিশ মহাপরিদর্শককে র্যাব মহাপরিচালকের পোশাকে দেখা যায়। কোনো একটি অভিযানের সময় তোলা ওই ছবির নিচে লেখা, ‘দ্য ম্যান বিহাইন্ড দ্য প্রোগ্রেস অব ড্রাগ, মিলিট্যান্সি অ্যান্ড এক্সট্রিমিজম ফ্রি বিলাভড বাংলাদেশ’ (মাদক, জঙ্গি ও উগ্র বাদমুক্ত প্রিয় বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রগতির কারিগর)। এর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের টুকরা অংশের কোলাজ জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দেয়।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতিরিক্ত আইজিপি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) মো. মনিরুল ইসলাম ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত হিসেবে বলা হয়।