সম্পাদকীয়
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও ফরিদপুরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী খায়রুজ্জামান খাজার কর্মকাণ্ডের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমানের কাছের লোক ছিলেন। এখন হয়েছেন যুবদল নেতা। ফলে তাঁর দাপট সমানতালে চলছে। এ নিয়ে ১৫ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও তাঁর অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সবশেষ একজন নিরীহ যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন তিনি। এই ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে একটি ভয়াবহ চিত্র, যেখানে আইনের শাসন যে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা স্পষ্ট হয়।
খায়রুজ্জামান খাজা নামটি ফরিদপুরে সন্ত্রাসের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে। সব সময় ক্ষমতার প্রশ্রয়ে তিনি একের পর এক অপরাধ করে গেছেন এবং এখনো করছেন। চাঁদাবাজি, ডাকাতি, হত্যা, এমনকি চোখ খুঁচিয়ে মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অপরাধের কারণে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হলেও তিনি নেতার বদৌলতে জেল থেকে বের হয়ে এসেছেন।
কথা ছিল ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে যুবদল কীভাবে আশ্রয় দিতে পারে? তাহলে বিএনপি কি আওয়ামী লীগের মতো সন্ত্রাসী পৃষ্ঠপোষক দল?
আগেও দেখা গেছে, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের একটা নিকট সম্পর্ক ছিল। সেই অবস্থা অবসানের জন্যই ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে বিজয়ী হয়েছে। তারা আর কখনো ওই ধরনের শাসন দেখতে চায় না। তারা চায় নতুন বাংলাদেশ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অন্যায়, অপকর্ম, লুণ্ঠন ও পাচারমুক্ত হবে। যেখানে সবাই রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন ভোগ করবে। কিন্তু ছাত্র-জনতার এই চাওয়া যেন অসম্ভবপর হয়ে উঠেছে, সেটা এ ধরনের ঘটনায় প্রমাণ করছে। পুরোনো বয়ান-বচন যেমন ফিরে আসছে, তেমনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদিও ফিরে আসছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার আহ্বান জানালেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার তোয়াক্কা করছেন না। জমি-প্রতিষ্ঠান দখল থেকে আরম্ভ করে পরিবহনসহ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে চাঁদাবাজিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম উচ্চারিত না হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির নামেও এসব অপকর্ম হচ্ছে, যা এত দিন আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ করেছে। তাই এখন বিএনপি বা তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা করবে—এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। এটা কেবল অনভিপ্রেত নয়, দুঃখজনকও। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত বিষয়টি আমলে নেওয়া এবং যথাযথ প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ ধরনের সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে কঠোর হতে হবে, যাতে কোনো চিহ্নিত সন্ত্রাসী আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা না পায়। প্রতিটি অপরাধের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। যে সমাজে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায়, সেই সমাজে অপরাধ দমন করা কেবল কঠিন নয়, অসম্ভব ব্যাপারও।