আজকের পত্রিকা
হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

শ্রমিক হত্যার বিচার হতে হবে

সম্পাদকীয়

শ্রমিক হত্যার বিচার হতে হবে

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়েক দিন আগে গুলি করে শ্রমিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের বেপরোয়া গুলিতেই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল ছিল বাঁশখালীর গন্ডামারা গ্রামের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও যুক্ত ছিল এস আলম গ্রুপের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী।

ঘটনাস্থলে ১০০ রাউন্ডেরও বেশি গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। অস্ত্রধারী এই বাহিনীদের বিপরীতে ছিল নিরস্ত্র শ্রমিক শ্রেণি। গুলি করার কারণ ছিল, শ্রমিকেরা সেদিন তাঁদের ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের হত্যা করা খুব সহজ। কারণ, এ দেশের নিম্নবিত্ত শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়ানোর, তাঁদের অধিকারের কথা বলার মতো মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তাই কলকারখানার শ্রমিকেরা জীবন সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে শোষণের বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে লিপ্ত থাকেন।

দেশের প্রচলিত নিয়মে আন্দোলনের শুরুতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করতে পারে না। পুলিশের নিয়ম অনুসারে শ্রমিকদের আন্দোলনকে থামাতে চাইলে প্রথমে আন্দোলন না করতে বলবে, এরপর কথা না শুনলে ছত্রভঙ্গ করবে, এরপরও আন্দোলন না থামালে লাঠিপেঠা করবে, আর একেবারেই পরিস্থিতি তাদের হাতের বাইরে চলে গেলে ফাঁকা গুলি ছুঁড়বে। কিন্তু শ্রমিকদের সরাসরি গুলি করা⸻এটা খুবই অমানবিক বিষয়।

বাঁশখালীর শ্রমিকেরা সেদিন বেতনের দাবিতে মাঠে নেমেছিলেন। শ্রমিকদের মতে, তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ পবিত্র রমজানে ১০ ঘণ্টার পরির্বতে ৮ ঘণ্টা কাজ করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষ তাঁদের ন্যায্য দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো কারখানাতে কাজ করার ঘোষণা দেয়। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হলে বেঁধে যায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ।

এই ঘটনায় নিহত পাঁচজন শ্রমিকের মধ্যে একজন শ্রমিক চায়ের দোকানে বসে রুটি খাচ্ছিলেন। কিন্তু রুটি খাওয়াও শেষ করতে পারেননি সেই শ্রমিক। তার আগেই তাঁকে গুলি খেয়ে মরে যেতে হলো। এর চেয়ে আর কোনো মর্মান্তিক দৃশ্য হতে পারে কি না, তা আমাদের জানা নেই। এই দৃশ্য আমরা রাখব কোথায়?

বাঁশখালিতে এখন শ্রমিক হারানোর শোক। সঙ্গে পুলিশের হয়রানির আতঙ্ক। ইতিমধ্যে বাঁশখালী থানায় দুটি মামলাও করা হয়েছে। মামলার একটিতে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধার অভিযোগ ও হামলা এবং অপর মামলাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো ঘটনার জন্য শ্রমিকদেরই দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শ্রমিকদের গুলিতেই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এই প্রবণতা দুঃখজনক। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতমুক্ত তদন্ত দাবি করছি। ঠুনকো কারণে মানুষ হত্যার বর্বরতা বন্ধ করতে হবে। বহিরাগত ব্যক্তিদের দায় বা উসকানি থাকলে তা-ও তদন্ত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাঁশখালীতে এমন হত্যার ঘটনা নতুন নয়। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাহিনীর গুলিতে কয়েকজন নিহত ও বহু গ্রামবাসী আহত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে জিতে গিয়েছিল ক্ষমতাধর এস আলম গ্রুপ। সেই হত্যাকাণ্ডের আজও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি।

সময়ে–অসময়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে না নিয়ে গুলি করা সমস্যা সমাধানের কোনো পথ হতে পারে না। শ্রমিকদের বুকে কতখানি ক্ষত হলে, তাঁরা আন্দোলনে মাঠে নামেন সেটা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।

শ্রমিকদরের ন্যায্য দাবিদাওয়া ক্রমাগত উপেক্ষার নীতি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মপরিবেশ বিঘ্নিত করে। মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের প্রতি নিষ্ঠুরতা পরিহার করতে হবে।

ফ্যাসিবাদ নিয়ে কথা

ঘোষণাপত্র নিয়ে মতপার্থক্য

সন্ত্রাসী!

নির্বাচনবিষয়ক ভাবনা

সংবিধান সংস্কার

ভুল ও ভোগান্তি

বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব

সহিংসতা হয়নি তা নয়

রিওভাইরাস: সচেতনতা জরুরি

চালের বাজারে অস্থিরতা