একটি হ্রদের পানির রং কেমন হতে পারে? আর যাই হোক, নিশ্চয় গোলাপি আশা করবেন না। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও অস্ট্রেলিয়ার লেক হিলিয়ারের জলের রং গোলাপি।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রিচার্চি দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ মিডল। এখানেই লেক হিলিয়ারের অবস্থান। বিশেষ করে ওপর থেকে দেখলে হ্রদটির গোলাপি রংটা সবচেয়ে সুন্দরভাবে ধরা দেয়। অবশ্য লেকের কাছাকাছি পর্যটকের এমনিতেও যাওয়া বারণ। আশ্চর্য সুন্দর গোলাপি জলের হ্রদটি তাঁদের দেখতে হয় হেলিকপ্টারে চড়ে বা উড়োজাহাজ থেকেই।
হ্রদটি দৈর্ঘ্যে ৬০০ মিটার বা ২০০০ হাজার ফুটের কাছাকাছি। চওড়ায় ২৫০ মিটার বা ৮০০ ফুটের মতো। এতে লবণের মাত্রা অত্যধিক। সাগরে সাধারণত যে পরিমাণ লবণ থাকে তার আট গুণ আছে এর জলে। হ্রদের পাড়ে বালুকাবেলা, তারপর আবার ইউকেলিপ্টাস আর পেপারবেক গাছের জঙ্গল। এই জঙ্গল আর বালিয়াড়ি হ্রদটিকে দক্ষিণ মহাসাগরের উত্তর প্রান্ত থেকে আলাদা করে রেখেছে।
মজার ঘটনা, একসময় অনেকের ধারণা ছিল লেক হিলিয়ারের গোলাপি জলের রহস্যে হয়তো আলোর কোনো প্রভাব আছে। কিন্তু পরে এর জল বড় পাত্র বা কন্টেইনারে নিয়ে দেখা গেছে সেটা গোলাপিই আছে।
হ্রদটি থেকে পানি ও পলি সংগ্রহ করা হয়। টিঘে, ম্যাকগ্রাথসহ তাঁদের সহকর্মীরা গবেষণায় মেতে উঠলেন নমুনাগুলো নিয়ে। এতেই জানা গেলে, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এমন শ পাঁচেক অণুজীব আছে হ্রদটিতে। আছে নানা জাতের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, শৈবাল। এদের বেশির ভাগ হেলোফিল জাতীয়, যাদের উচ্চমাত্রার লবণে টিকে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। এগুলোর কোনো কোনোটি খুব বর্ণিল। যেমন বেগুনি সালফার ব্যাকটেরিয়া, লাল-কমলা সেলাইনি বেকটার ও লাল রঙের শৈবাল ডানালিয়েল্লা সেলিনা। এসব অণুজীবের মিশ্রণ, সেই সঙ্গে আরও কিছু মিলিয়ে এই গোলাপি রঙের জন্ম।
বিংশ শতকের গোড়ার দিকে কয়েকটি বছর এই এলাকা থেকে লবণ আহরণ করা হয়। ওই সময়টা মিডল্যান্ড দ্বীপ ও হিলিয়ার হ্রদ বেশ বিপদগ্রস্ত ছিল। তারপর থেকে অবশ্য এর পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগ দেওয়া হয়। হ্রদসহ গোটা দ্বীপ এলাকাটিতে গবেষক ছাড়া সাধারণের প্রবেশ সংরক্ষিত। অবশ্য কেউ যদি লেকের কাছে যাওয়ার বিশেষ অনুমতির ব্যবস্থা করতেও পারেন, দুর্গম এলাকায় হওয়ায় সেখানে পৌঁছা সহজ নয় মোটেই।
তাহলে কি সাধারণ পর্যটক অদ্ভুত সুন্দর এই গোলাপি জলের হ্রদ দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হন? তা কেন হবে? এর সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ পান পর্যটকেরা হেলিকপ্টার ভ্রমণের মাধ্যমে, পাখির চোখে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিয়ম করে হেলিকপ্টার রাইডের ব্যবস্থা আছে তাঁদের জন্য। বছরের বাকি সময় লেকের সৌন্দর্য পাখির চোখে দেখতে হলে গোটা হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হবে।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, নিউ সায়েন্টিস্ট কম