প্রথম দেখায় ছিমছাম, শান্ত এক শহর বলেই মনে হবে কোলমাকে। হয়তো আপনার নজর কাড়বে এখানকার সাদা দালান আর সুন্দর রাস্তাগুলা। তবে শহরে একটু ঘোরাফেরা করলেই অদ্ভুত একটি বিষয় নজর কাড়বে, এখানে গোরস্থানের সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম বেশি।
সত্যি বলতে, এখানে এক হিসাবে মৃতদেরই রাজত্ব বলতে পারেন। কারণ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এই শহরে সমাধিস্থ করা মানুষের সংখ্যা বাস করা জীবিত মানুষদের চেয়ে অনেকই বেশি। কোলমা শহরটিকে তাই অনেকেই চেনে সিটি অব সাইলেন্ট বা সিটি অব ডেড নামে। সান ফ্রান্সিসকোর অন্য শহরগুলোর মতোই এখনকার যে অবস্থা, এতে পৌঁছাতে নানা ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে শহরটি। এতে এর গোরস্থানগুলোরও ভালো ভূমিকা আছে।
এখন নিশ্চয় আপনার জানতে ইচ্ছা করছে, কোলমা এভাবে মৃতদের দখলে চলে গেল কীভাবে? স্প্যানিশ মিশনারিরা যখন ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোয় আসেন, তখন গোটা আমেরিকা মহাদেশ ও ইউরোপ থেকে অভিবাসীরা আসতে শুরু করে শহরটিতে। সান ফ্রান্সিসকো ছিল খনি শহর। স্বর্ণ ও রুপার খনিতে কাজ করার জন্য হু হু করে মানুষ আসতে থাকে শহরটিতে। এদিকে রেল রোড চলে আসায় শহরে তখন অন্যরকম এক কর্মব্যস্ততা। কিন্তু এখানে একটাই সমস্যা, তা হলো মৃতরা।
এদিকে যতই দিন গড়াতে লাগল, বিশাল গোরস্থানগুলো থেকে সংক্রামক ব্যাধি শহরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাসা বাঁধতে লাগল শহরের বাসিন্দাদের মনে। সমাধিগুলো শহর থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য আন্দোলন শুরু করলেন তাঁরা। এদিকে মূল শহরের ভেতরের এমনকি ছোট্ট জায়গাটুকুও কাজে লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন লেন্ড ডেভেলপাররা।
সে সময় মৃতদেহ স্থানান্তর মোটেই সহজ কাজ ছিল না। তা ছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেদিন সমাধি থেকে তোলা হবে, সেদিনই কোলমায় পাঠানো হবে। কোনো কোনো মৃতদেহকে এমনকি যে কফিনে পুরে সমাধিস্থ করা হয়, সেটি সহই স্থানান্তর করা হয়।
শহরে সমাধিস্থ করা মোট মানুষের সংখ্যা কত জানেন? আনুমানিক ১৫ লাখ। এখনো এসব গোরস্থানে নতুন নতুন মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়। এর বিপরীতে শহরের বর্তমান জনসংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি। অন্যদিকে সান ফ্রান্সিসকো শহরে এখন আছে কেবল কয়েকটি গোরস্থান। মিশন ডলোরেস, দ্য প্রেসিডো (এখানে পোষা প্রাণীদের ছোট্ট একটা গোরস্থানও আছে) আর লাভলি রিচমন্ড ডিসট্রিক্ট কলামবেরিয়াম।
শহরে জীবিতের চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ মৃতের উপস্থিতি কোলমা শহরের নীতি-নির্ধারকদের আশ্চর্য এক স্লোগান তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে। সিটি কাউন্সিলের অফিশিয়াল এই স্লোগান হলো, ‘কোলমাতে বেঁচে থাকাই দারুণ ব্যাপার’। তেমনি শহরটি পরিচিতি পেয়ে গেছে আরও কিছু নামে, যেমন, ‘মৃতদের শহর’, ‘নীরবতার শহর’, ‘আত্মাদের শহর’ ইত্যাদি।
সূত্র: আনইউজাল প্লেসেস, এটলাস অবসকিউরা, র্যাঙ্কার ডট কম