অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের শহর জুনিতে আছে মন্টি ক্রিস্টো হোমস্টেড নামের এক বাড়ি। অনেকেই একে বিবেচনা করেন দেশটির সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়িগুলোর একটি হিসেবে। অদৃশ্য কারও পায়ের শব্দ, শরীরে শীতল কোনো হাতের ছোঁয়া, শূন্য থেকে ভেসে আসা রহস্যময় কণ্ঠ—এমনই নানা অতিপ্রাকৃত ঘটনার খবর শোনা যায় বাড়িটিকে ঘিরে।
মন্টি ক্রিস্টো নামের বাড়িটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ৫২ বছর আগে, ১৯৭১ সালে। তারপর থেকেই এখানে ঘটা ভুতুড়ে সব ঘটনার টানে জায়গাটিতে হাজির হচ্ছেন রোমাঞ্চপ্রেমী মানুষ। গড়ে ফি বছর ১০ হাজার মানুষের পা পড়ে বাড়িটিতে।
আরও নানা ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেন এখানে আসা দর্শনার্থীরা। একজন যেমন মাথায় কিছুর আঘাত পান, যদিও তাঁর আশপাশে কেউ ছিল না। আবার কখনো শ্বাসকষ্ট ছিল না এমন একটি মেয়েকে এখানে বারবার শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। বিভিন্ন প্রাণী, ছায়ামূর্তির উপস্থিতির ঘটনাও বলেন পর্যটকদের কেউ কেউ।
বাড়িটির প্রথম মালিক ক্রিস্টোফার ও অলিভার ক্রউলি মারা যান ১৯১০ ও ১৯৩৩ সালে। অলিভ রায়ানের দাবি, এখনো বাড়িটিতে ঘোরাফেরা করে তাঁদের আত্মা।
‘বাতাস শোঁ-শোঁ শব্দ তুলে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসত, বাদুড়েরা ওড়াউড়ি করত ভেতরে।’ বলেন তিনি, ‘তবে মেয়েরা ভালোই ছিল। প্রচুর মুক্ত বাতাস পায় তারা এখানে।’
অলিভ রায়ান জানেন, এখানকার অতিপ্রাকৃত ঘটনার উৎস সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। একসময়কার পোশাক নির্মাতা এই নারী এখনো বাড়িটিতে বাস করেন। তাঁর দাবি, চারপাশে ঘুরে বেড়ানো আত্মাদের থেকে কখনো বিপদ আসেনি। তাঁর ছেলে লরেন্স যিনি বাড়িটিতেই থাকেন, তিনি জানান, এখানে বেড়ে ওঠা সাধারণই ছিল।
‘তবে আমার অনেক সময়ই মনে হয়েছে আড়াল থেকে কেউ দেখছে আমাকে।’ যোগ করেন তিনি, ‘আমাকে কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়নি। আমাকে বিভিন্ন ঘটনা ভয় পাওয়াতো, তবে সেটা ওই বয়সের বাচ্চারা নিজে থেকেই নিজেদের কামরায় যতটা ভয় পেত, এর চেয়ে বেশি নয়।
লরেন্স রায়ানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সিলভিয়া হেজতেরেনিয়োভার দেখা হয় এই বাড়িতেই। তখন স্লোভাকিয়া থেকে আসার পর মন্টি ক্রিস্টোতে ঘুরতে আসেন তিনি।
লরেন্স রায়ান বলেন, এই বাড়িতে এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে অতীতে, যেগুলোকে নিছক কাকতালীয় বলা মুশকিল। ‘এই বাড়িতেই বহু বছর আগে একজন ন্যানির হাত থেকে পড়ে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে মারা যায় একটি শিশু। ওই নারী দাবি করেন, শিশুটা লাফ দিয়ে তাঁর হাত থেকে পড়ে যায়। এ ছাড়া আছে এক গৃহ পরিচারিকার আত্মহত্যার ঘটনা। মি. ক্রউলির সঙ্গে যার সম্পর্ক ছিল।’
আবার ঘোড়ার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা একটি ছেলে আগুনে পুড়ে মার যাওয়ার কথাও শোনা যায়। ১৯৬১ সালে গুলিতে এখানকার ওই সময়ের কেয়ারটেকারের মারা যাওয়ার ঘটনাও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। আবার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ৩০ বছরের বেশি বাড়ির আউট হাউসে বেঁধে রেখেছিলেন এক হাউসকিপার। বলা চলে এখানে অস্বাভাবিক মারা যাওয়া মানুষের আত্মাই ঘুরে বেড়ায় বাড়িটিতে আজও।
লরেন্স রায়ান জানান, ভুতুড়ে বাড়িটার ভেতরে তোলা কিছু ছবি এর ভেতরে যে আসলেই অতিপ্রাকৃত বিভিন্ন কিছুর উপস্থিতি আছে তা নিশ্চিত করছে।
‘আমরা অনেক অবিশ্বাসীকে পাই। এদের অনেকেরই এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আত্মা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা বদলে যায়।’ বলেন লরেন্স রায়ান।
যদি কোনো কারণে ভুতুড়ে বাড়িটায় গিয়ে ভয়ের কোনো অভিজ্ঞতা না হয়, কিংবা ভয় না পান, তবে এখানকার হন্টেড ডল মিউজিয়াম শিরশিরে একটা অনুভূতি এনে দিতে পারে শিরদাঁড়ায়। ১০ হাজার পুতুলের জাদুঘরের একটি অংশ পাবেন হরর ছবির বিভিন্ন চরিত্রকে।
সূত্র: দ্য ক্যানবেরা টাইমস, ডেইলি মেইল