হোম > ল–র–ব–য–হ

দুর্গম দ্বীপটির জনসংখ্যা ২০, পাখি বাস করে ১০ লাখ

অনলাইন ডেস্ক

গ্রিমসে দ্বীপটি আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি দেশের সবচেয়ে উত্তরের বসতি। ছবি: সংগৃহীত

আইসল্যান্ডের উত্তরের উপকূল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের দুর্গম এক দ্বীপ গ্রিমসে। ছোট্ট দ্বীপটি ইউরোপের দুর্গমতম বসতিগুলোর একটি হিসেবে আলাদা নাম আছে। তেমনি নানা প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল হিসেবেও বিখ্যাত গ্রিমসে।

এমনকি আগস্টের শেষের একটি রোদেলা দিনেও দ্বীপটির বাতাস এতটাই প্রবল থাকে যে, আপনার মনে হতে পারে ঝোড়ো হাওয়া হয়তো উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

এই দ্বীপে হাঁটার সময় হাতে একটা লাঠি রাখা উত্তম। ভাববেন না উঁচু-নিচু এবড়োখেবড়ো ভূমিতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এর প্রয়োজন, বরং আর্কটিক টার্ন নামের একধরনের সামুদ্রিক পাখির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে এটা কাজ করে। এই পাখিদের বাসার কাছাকাছি চলে এলে পর্যটকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার দুর্নাম আছে।

দ্বীপটির নাটকীয় ব্যাসাল্ট পাহাড়ের চারপাশে ধীরে ধীরে হাঁটতে গিয়ে হয়তো দেখবেন কিছু পাফিন পাখি, যারা তখনো সমুদ্রের দিকে উড়ে যায়নি। এই পাখিরা এপ্রিল মাসে দ্বীপে ফিরে এসে তাদের বাসা তৈরি করে।

মাত্র সাড়ে ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ আইসল্যান্ডের সবচেয়ে উত্তরের জনবসতি। আর এটি পড়েছে আর্কটিক সার্কেল বা বৃত্তের মধ্যে। কঠোর প্রকৃতি এবং এর দূরবর্তী অবস্থান এই দ্বীপকে আইসল্যান্ডের অন্যতম রহস্যময় ও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

দ্বীপটির এয়ারস্ট্রিপটি পাখিদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। ছবি: বিবিসি

১৯৩১ সালের আগে গ্রিমসেতে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ছিল একটি ছোট বোট। বছরে মাত্র দুবার চিঠি নিয়ে দ্বীপে আসত এটি। এখন, আকুরেইরি শহর থেকে ২০ মিনিটের বিমান বা দালভিক গ্রাম থেকে তিন ঘণ্টায় ফেরিতে পর্যটকেরা দ্বীপে পৌঁছাতে পারেন।

বিশেষ করে যাঁরা ইউরোপের দূরবর্তী বসতিগুলো দেখতে চান এবং এখানে বসবাসকারী সামুদ্রিক পাখি ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গ উপভোগ করতে চান, সেই সব পর্যটকের জন্য এটি রীতিমতো আদর্শ এক গন্তব্য। পাফিন, কালো পায়ের একধরনের গাঙচিল, রেজরবিল এবং গিলেমট প্রজাতির পাখিরা এই দ্বীপে থাকে। এ ছাড়া, আইসল্যান্ডিক ঘোড়া এবং ভেড়ার পাল দ্বীপে অবাধে ঘোরাফেরা করে।

গ্রিমসেতে বর্তমানে মাত্র ২০ জন স্থায়ী বাসিন্দা রয়েছে। অনুমান করা হয় এখানে এখানে ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখির বাস। অর্থাৎ, দ্বীপের পাখির সংখ্যা মানব জনসংখ্যার ৫০ হাজার গুণ।

স্থানীয় গাইড এবং আর্কটিক ট্রিপ নামের একটি ট্যুর কোম্পানির মালিক হাতলা ইঙ্গলফসদত্তির বলেন, ‘আপনি বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু আমরা এখানে মাত্র ২০ জন মানুষ বসবাস করি।’

দ্বীপটিতে একটি বাতিঘর আছে। ছবি: সংগৃহীত

তিনি ২০১৯ সালে গ্রিমসেতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানকার মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি তাঁকে এখানেই থাকতে অনুপ্রাণিত করে।

‘ট্যুরে আসা মানুষ প্রায়ই জানতে চান, আমি কি একঘেয়ে হয়ে যাই না? কিন্তু আমার করার মতো অনেক কাজ থাকে। আমরা মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষের মতোই জীবনযাপন করি। আমরা কাজ করি, জিমে যাই, ব্যায়াম করি। তবে প্রকৃতিই আমাকে এখানে ধরে রেখেছে।’

গ্রিমসের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। দ্বীপটি একমাত্র ডিজেলচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ পায়। দ্বীপে কোনো হাসপাতাল, ডাক্তার বা পুলিশ স্টেশন নেই। তিন সপ্তাহ পর পর একজন চিকিৎসক দ্বীপের বাসিন্দাদের পরীক্ষা করতে আসেন। জরুরি পরিস্থিতিতে কোস্ট গার্ড এবং অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয়দের সাহায্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ছোট একটি বসতি রয়েছে, যেখানে কিছু বাড়ি রয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোই পর্যটকদের জন্য অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বসতিকে সান্দভিক নামে ডাকা হয়। এখানে একটি স্কুল ভবন রয়েছে, যা বর্তমানে একটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি, একটি হস্তশিল্প গ্যালারি এবং একটি ক্যাফে রয়েছে, যেখানে আইসল্যান্ডিক হাতে তৈরি জিনিসপত্র, উলের পোশাক এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী বিক্রি হয়।

বছরজুড়ে দ্বীপটিতে মাত্র ২০ জন মানুষ বসবাস করেন, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক খুব গাঢ়। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া এখানে প্রতিদিন এক ঘণ্টার জন্য খোলা থাকে একটি ছোট মুদি দোকান। দ্বীপে একটি রেস্টুরেন্ট ও বার, একটি সুইমিং পুল, একটি লাইব্রেরি, একটি চার্চ এবং একটি বিমানবন্দরও রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এই বিমানবন্দর পাখিদের জন্যও একটি জনপ্রিয় অবতরণ স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১০ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত পাফিন পাখিরা দ্বীপে বাসা বাঁধতে আসে। এই সময়েই পর্যটকেরা দ্বীপে পাখি পর্যবেক্ষণে আসেন। এ ছাড়া দ্বীপের একটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হলো অরবিস এৎ গ্লোবাস নামের একটি বিশাল কংক্রিটের ভাস্কর্য, যা আর্কটিক বৃত্ত এবং গ্রিমসের সংযোগস্থলকে চিহ্নিত করে।

পর্যটক এবং আইসল্যান্ডিক ঘোড়াগুলো দ্বীপের ‘অরবিস এৎ গ্লোবাস’ নামে পরিচিত কংক্রিটের বলটি ভারি পছন্দ। ছবি: বিবিসি

গ্রিমসের এত উত্তরের অবস্থান মানে এই যে দ্বীপবাসীরা নর্দার্ন লাইটের দেখা পান, যেখানে দ্বীপটি ডিসেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত কয়েক মাসের জন্য সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে থাকে। শীতের এই দীর্ঘ রাতগুলোতে নিয়মিতই দেখা মেলে নর্দার্ন লাইটের। ইঙ্গলফসদত্তির বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে, অন্ধকার আমাকে বিরক্ত করে না। কিছু মানুষের জন্য এটি একটি নির্দিষ্ট সীমার পর বিরক্তিকর হতে পারে, কিন্তু আমরা জানি যে আবার আলো ফিরে আসবে।’

আগামী গ্রীষ্মের মধ্যেই কিছু নতুন উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে লেখক ও অন্যান্য সৃজনশীল ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ আবাসস্থল তৈরি করার কথা রয়েছে। দ্বীপের কিছু বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দীর্ঘমেয়াদি থাকার জন্য উপযোগী করে তোলা হবে।

স্থানীয়রা দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা এবং এর ছোট কিন্তু উষ্ণ কমিউনিটির চেতনা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গ্রিমসে যেমন প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য, পাখিদের গান এবং আকাশে উত্তর প্রভা দেখা যায়, তেমনি দ্বীপের বাসিন্দাদের আন্তরিকতা এবং বন্ধন এই জায়গাকে সত্যিই বিশেষ করে তুলেছে।

১২ ঘণ্টায় ১ হাজার পুরুষের সঙ্গে শয্যায় তরুণী, গড়লেন রেকর্ড

স্বপ্নে পাওয়া নম্বরে লটারি জিতলেন মার্কিন নারী

বিপৎসংকেত পেয়ে এক বাড়িতে হাজির হয়ে যা আবিষ্কার করলেন নিরাপত্তাকর্মীরা

৫ কিলোমিটারের গন্তব্যে ৩৮১৯৭ টাকা ভাড়া নিল উবার

এক ডিমের দাম ৩০ হাজার টাকা

একদিনে ১০১ পুরুষের সঙ্গে বিছানায় তরুণী, টার্গেট ১ হাজার

লাইব্রেরির দেয়ালে লুকানো ছিল ২০০ বছর পুরোনো শহরের প্রবেশদ্বার

এক জোড়া জুতার দাম ৩৩৫ কোটি টাকা!

বরের বয়স ১০০, কনের ১০২

পাঁচ বাক্সে লুকানো আছে ২৪ কোটি টাকার গুপ্তধন, সূত্র মিলবে বইয়ে

সেকশন