অনলাইন ডেস্ক
আমাদের শরীরের কোনো অংশ কেটে গেল রক্ত বের হয়। কিন্তু যদি দেখেন একটি গাছ কাটার পর সেখান থেকে লাল রক্তের মতো পদার্থ বের হচ্ছে, চমকে উঠবেন নিশ্চয়! কিছুটা ভয়ও পেয়ে যেতে পারেন হয়তো। কিন্তু ব্লাডউড নামে পরিচিত গাছটির গুঁড়ি বা ডাল কাটলে সত্যি সেখান দিয়ে ঘন লাল রক্তের মতো পদার্থ বের হয়ে আসতে থাকে।
তবে রক্তের মতো দেখতে হলেও এটা কিন্তু রক্ত নয়। এটা একধরনের উদ্ভিদ রস। আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলে পাওয়া এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম টেরোকারপাস অ্যাঙ্গোলেনসিস। তবে সাউথ আফ্রিকান ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি ইনস্টিটিউট (সানবি) জানাচ্ছে, এটি আরও কিছু নামেও পরিচিত। যেমন—ব্লাডউড, কিয়াত, পেডল উড, বুনো টিক বা সেগুন ইত্যাদি। এ ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় আরও নানা নামে পরিচিত এটি।
টেরোকার্পাস অ্যাঙ্গোলেনসিস গাছের ছবিগুলো দেখলে যে কেউ এর ব্লাডউড নামের যৌক্তিকতা বুঝতে পারবেন। ঝরে পড়া লাল রস দেখে মনে হয় যে কাটা অংশ থেকে রক্তপাত হচ্ছে। কিন্তু এটি আসলে ট্যানিন-সমৃদ্ধ (একধরনের রাসায়নিক যৌগ) উদ্ভিদ রস। বেশির ভাগ গাছের বিভিন্ন অংশ, বিশেষ করে পাতায় ১২ থেকে ২০ শতাংশ ট্যানিন থাকে। সে তুলনায় ব্লাডউডের রসে ট্যানিনের পরিমাণ ৭৭ শতাংশ।
আফ্রিকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এর লাল রঙের কারণে নানা ধারণার জন্ম নিয়েছে। তাঁরা মনে করেন, রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এটি খুব ভালো কাজ করে। দাদ, ছুরিকাঘাতের ব্যথা, চোখের সমস্যা, ম্যালেরিয়া, ব্ল্যাক ওয়াটার জ্বর এবং পেটের সমস্যার মতো বিষয়গুলোতেও গাছের নির্যাস ব্যবহার করে চিকিৎসা করেন স্থানীয়রা। দক্ষিণ আফ্রিকায় গাছটিকে সংরক্ষিত বৃক্ষ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে অন্য সব গুণাগুণ বাদ দিয়ে এর আশ্চর্য লাল রস যে ব্লাডউডকে অন্য গাছদের থেকে আলাদা জায়গায় নিয়ে গেছে তাতে সন্দেহ নেই। কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে কিংবা মোজাম্বিকে ভ্রমণে গেলে ব্লাডউড দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি!
সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, নিউজ এইটিন, আফ্রিকা চেক ডট অরগ