নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
‘চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ শিশু চার দেয়ালের মাঝে বন্দিজীবন কাটায়। একটু অবসর পেলেই সিআরবিতে গিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। শুধু শিশুরাই নয়, নবীন-প্রবীণ—সব শ্রেণির মানুষ এখানে এসে প্রকৃতিকে উপভোগ করেb। চট্টগ্রামের শিশুদের পক্ষ থেকে এটি রক্ষায় মানবিক আবেদন জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে এভাবেই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে শিশু মিমবর হুরে জান্নাত। চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মিমবর থাকে নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। সেখান অঙ্কুর সোসাইটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠি গত বৃহস্পতিবার ডাকযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে সে।
চিঠিতে মিমবর লিখেছে, ‘শতবর্ষী বৃক্ষের বৈচিত্র্যে ভরা চট্টগ্রামের ফুসফুসটিকে ধ্বংস করে বাংলাদেশ রেলওয়ে সেখানে নাকি একটা বেসরকারি হাসপাতাল বানাতে চায়। হাসপাতাল হোক, কিন্তু সেটা ফুসফুসকে ধ্বংস করে নয়। এটাই বীর চট্টলার দাবি। এ দাবির জন্য এত আন্দোলন, এত ক্ষোভ, এত সভা।’
মিমবরের আশঙ্কা, ‘হাসপাতাল হলে ধীরে ধীরে তাঁদের সমাধিস্থল বিলীন হয়ে যাবে।’ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এই সিআরবি তথা পাহাড়তলি ছিল বিপ্লবের সূতিকাগার। একটি হেরিটেজ জোন হিসেবে সিআরবিকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছে শিশু মিমবর।
প্রকৃতি ধ্বংস করে অবকাঠামো বানালে তার মতো একটি ছোট মানুষের মনেও ব্যাপারটি দাগ কেটে যাবে জানিয়ে মিমবর লিখেছে, ‘আমি ছোট মানুষ, তা-ও সিআরবিকে অনেক ভালোবাসি। তাই আমি সিআরবি রক্ষার প্রতিবাদস্বরূপ তিনটি কবিতা লিখেছি। আশা করি, আপনি সেগুলো দেখবেন। আমরা আপনাকে শিশুপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী ও মানবতাবাদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জানি। আপনি একজন সত্যবাদী, নিষ্ঠাবান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করা যেসব লোভীর চোখ সিআরবিতে পড়েছে, তারা নিশ্চয় আপনাকে ভুল বুঝিয়েছে। তাই আমরা এখনো সিআরবি রক্ষার সঠিক সিদ্ধান্ত পাইনি।’
চিঠির শেষাংশে মিমবর লেখে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমার শ্রদ্ধেয় নানুর মতো। আর আমি আপনার নাতনির বয়সী। তাই আশা করি আপনি আমার আবদার ফেলবেন না। ইতি, আপনার স্নেহধন্য, মিমবর হুরে জান্নাত।’