নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুটি বিভাগ আলাদা দামে ইন্টারনেট-সেবা কিনছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোট ৬০টি ইন্টারনেট-সংযোগের মধ্যে ১০টির বিল করেছে প্রকৌশল বিভাগ, যা অপর ৫০ সংযোগের দামের তুলনায় অন্তত ৪ গুণ বেশি। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই ৫০টি সংযোগের ইন্টারনেট দর বাজারমূল্যের কাছাকাছি।
জানা গেছে, অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যান্ডউইথ কিনে তা ৮ গুণ বেশি দামে চসিকের প্রকৌশল বিভাগকে দিচ্ছে সেন্ট্রাল কম্পিউটারস নামের এক প্রতিষ্ঠান। ইন্টারনেটের এই দর রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেড (বিটিসিএল) দরেরও ৩ গুণ বেশি।
অভিযোগ উঠেছে, করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে হাত করে সেন্ট্রাল কম্পিউটারস কাজটি পায় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ৩ গুণ বেশি দামে। এ প্রতিষ্ঠানটিই প্রকৌশল বিভাগের ১০ সংযোগের ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এসব সংযোগে প্রতি এমবিপিএসের দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা করে, যা বিটিসিএল বিক্রি করে ৩৯৫ টাকায়। এ-সংক্রান্ত দরপত্রে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাব ছিল ৩৫০ টাকা। বেশি দামে ইন্টারনেট নেওয়ায় গত তিন বছরে চসিকের বাড়তি ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ নিয়ে আমি একটি তদন্ত কমিটি করে দিচ্ছি।’
সেন্ট্রাল কম্পিউটারসের মালিক মোহাম্মদ সুমন স্বীকার করেন, তাঁরা এফএনএফ নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টারনেট কিনে সরবরাহ দিচ্ছেন সিটি করপোরেশনকে। তবে কত দামে কিনছেন, তা জানাতে চাননি তিনি।
এফএনএফের বিক্রয় নির্বাহী রইসুল খান বলেছেন, যে কেউ ৩৪ এমবিপিএসের ডেডিকেটেড সংযোগ নিলেও বিল হবে প্রায় ৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি এমবিপিএসের দর মাত্র ১১৭ টাকা। অথচ এই ইন্টারনেট-সেবার জন্য চসিক বিল দিচ্ছে প্রতি এমবিপিএস ১ হাজার ২৫০ টাকা করে।
২০১৮ সালে ইন্টারনেট সরবরাহের দরপত্রে প্রতিযোগিতা করে ৩৫০ টাকা এমবিপিএস দামে সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাব ছিল আইকিউ টেল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। অথচ এমবিপিএস প্রতি ৯০০ টাকায় কার্যাদেশ পায় সেন্ট্রাল কম্পিউটারস।
এ বিষয়ে করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার ঝুলন কুমার দাস বলেন, ‘এসব বিল আমরা চাইলেই দিতে পারি না। আইটি বিভাগের মতামত নিয়েই আমরা ইন্টারনেট-সংযোগ ও বিল দিই।’
তবে আইটি বিভাগের প্রোগ্রামার মো. সকাল হাসান বলেন, ‘বেশি দামের ১০টি সংযোগের লাইন বিদ্যুৎ বিভাগের। আমরা বিল দিই প্রতি এমবিপিএস ৩৫০ টাকার কাছাকাছি।’
করপোরেশনে বিল উপস্থাপনকারীদের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী রূপক চন্দ্র দাশ। তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা জানান। আর চসিকের সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ারা হক চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প পরিদর্শনে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কথা বলেন তিনি।