সংস্কার নিয়ে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জাতীয় সরকার গঠন করে ৩১ দফা সংস্কার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করবে বিএনপি।
আজ রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়ন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সিভাসু ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আমীর খসরু বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা চিন্তা করে বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল মিলে আমরা ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দেড় বছর আগেই দিয়েছিলাম। সব সংস্কারের কথা ওখানে বলা আছে। সুতরাং, সংস্কার নিয়ে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা জাতীয় সরকার করে ৩১ দফা সংস্কার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করব।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট বিতাড়িত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে তা সবাইকে বুঝতে হবে। যারা বুঝতে পারবে না সেই রাজনীতিবিদ হোক, শিক্ষক হোক, তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের চিন্তা, ভাবনা, দর্শন একেবারে বদলে গেছে। যারা সেটা অনুধাবন করতে পারবে না, ধারণ করতে পারবে না এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারবে না তাদের জন্য আগামীর বাংলাদেশ কঠিন হয়ে যাবে।’
নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ না হলে শিক্ষার কোনে মূল্য নেই। সর্বক্ষেত্রে ভিন্নমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।’
আজ সকাল ১০টায় সিভাসু অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান। সমারম্ভ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যে সুযোগ বাংলাদেশে রয়েছে, তা খুব কম দেশেই আছে। আমরা কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করিনি। আমরা বিনিয়োগ করেছি পদ্মা ব্রিজে, আমরা বিনিয়োগ করেছি টানেলে। কিন্তু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের বিনিয়োগ করা দরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। এই দুই খাতে বিনিয়োগ ছাড়া মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব নয়।’
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, বিশ্বমানের পাঠ্যসূচি, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি এবং ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশনের মাধ্যমে সিভাসুর শিক্ষার্থীরা অর্জন করছে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা। ইউরোপ-আমেরিকার আদলে দেশে প্রথমবারের মতো এখানে চালু করা হয়েছে ‘প্রবলেম বেইসড লার্নিং’ পদ্ধতি।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ এবং এক স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়ন তথা মানুষ, পরিবেশ ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে সিভাসু।
সমারম্ভ বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘জীবনে কী হতে চাও, তা এখনই ঠিক করতে হবে। সেই অনুযায়ী এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তাহলেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।’
নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করলে জীবনে সফলতা আসবেই। গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদে মোট ২৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তাদের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিভাসুর ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. কামাল, ফুড সায়েন্স ও টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী আকতার এবং ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেখ আহমাদ-আল-নাহিদ।
সিভাসুর পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রাশেদুল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে চারজন নবাগত শিক্ষার্থী তাঁদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।