সম্পাদকীয়
১৯২৫ সালে জন্মেছিলেন আবদুস সালাম। ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মুন্সি আবদুল ফাজেল মিয়া তাঁর বাবা। মা দৌলতন্নেসা। বাবা ফাজেল মিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং ইরাকের বসরায় কর্মরত ছিলেন। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে সালাম ছিলেন সবার বড়।
কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর তিনি মাতুভূঞা কলিমুল্লাহ মাইনর স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর দাগনভূঞা আতাতুর্ক হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অর্থাভাবে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। কাজের খোঁজে এ সময় তিনি কলকাতার মেটিয়াবুরুজে তাঁর চাচাতো বোনের বাড়িতে যান। চাচাতো বোনের স্বামী আবদুল কাদের তাঁকে কলকাতা বন্দরে চাকরি জুটিয়ে দেন। ভারতভাগের পর সালাম ঢাকায় চলে আসেন। আজিমপুরের পলাশী ব্যারাকে থাকতে শুরু করেন। চাচাতো ভাই আবদুল হালিমের সহায়তার তিনি দিলকুশার ‘ডাইরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ’-এ পিয়ন পদে চাকরি নেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানেই তিনি কাজ করেছেন।
ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টায় মেডিকেল কলেজের সামনে। তিনি মারা গিয়েছিলেন সে বছরই ৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
৭ এপ্রিল সালামের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের কাছে তাঁর মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। সালামের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর পিতা মুন্সি আবদুল ফাজেল মিয়া এবং চাচাতো ভাই মকবুল। আবদুস সালামের কবর আজিমপুর গোরস্থানে ঠিক কোথায় আছে, সেটি এখনো স্পষ্ট জানা যায়নি।
ভাষাশহীদ আবদুস সালামের রক্তমাখা শার্টটি সংরক্ষণ করেছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু একদিন সেটা চুরি হয়ে গিয়েছিল। তার একটি ছবি সংরক্ষিত ছিল; কিন্তু সেটি ভাষাসংগ্রামী খাজা আহমদকে পরিবারের পক্ষ থেকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর ছবিটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯৫২ সালে তিনি থাকতেন নীলক্ষেত ব্যারাকে। তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর।
সূত্র: এম আর মাহবুব, একুশের অমর ভাষাশহীদ, গৌরব প্রকাশন, ২০১৭, পৃষ্ঠা ৪৪-৪৬