নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আলো ফোটার আগেই প্রভাতফেরির ঢল নামে শহীদ মিনারে। টিএসসি, ঢাকা মেডিকেল, কলাভবন ও কার্জন হল এলাকা ঘিরে তা বাড়তে থাকে। সেখান থেকে জনস্রোত ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে অমর একুশে বইমেলায়। গতকাল তাই বইমেলা ছিল সবচেয়ে জমজমাট।
মেলায় আসা নারী দর্শনার্থীদের অধিকাংশের পরনে ছিল কালো শাড়ি, ছেলেদের গায়ে পাঞ্জাবি। কারও মাথায় ফুলের টায়রা। কেউ গালে এঁকে নিয়েছেন বর্ণমালা। সবার মধ্যেই একটা উৎসবের আমেজ। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আর ছুটির উদ্যাপন যেন মিলেমিশে একাকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল হায়াত তাঁর বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। বললেন, ‘সকাল থেকেই আছি এই এলাকায়। প্রথমে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটু ঘুরলাম। এখন এলাম বইমেলায়। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বের হলেও যেহেতু সরকারি ছুটির দিন, তাই সবার মনে একটা উৎসবের আমেজ আছে।’
ঢাকার বাইরে থেকেও মেলায় এসেছেন অনেকে। তাঁদেরই একজন আব্দুল গাফফার। এসেছেন নরসিংদী থেকে। তিনি বললেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছা, এই দিনে শহীদ মিনারে আসব। খুব ভালো লেগেছে। অসম্ভব ভিড়। এত মানুষ হয় জানতাম না।’
মেলায় দল বেঁধে ঘুরতে এসেছে পুরান ঢাকার তরুণ-তরুণীদের একটি দল। সেই দলে আছেন ঐশী, তানিম, রাখি, নাফিস ও তাঁদের বন্ধুরা। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা একজন আরেকজনের ছবি তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হলো বই কেনা নিয়ে। রাখি বললেন, ‘বই কিনেছি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের। আজকে আর কিনব না। সুন্দর সুন্দর স্টলের সামনে ছবি তুলব।’
গতকাল একুশে ফেব্রুয়ারির আয়োজন থাকায় মেলা শুরু হয় সকাল ৮টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৩৪টি। এ পর্যন্ত মোট বই এসেছে ২ হাজার ৩২৬টি। মেলায় আসা বইয়ের কয়েকটি হলো—র্যামন পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত আনিসুল হকের ‘অমাবস্যার রাতে কে এসেছিল’, দোয়েল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত মৈত্রেয়ী দেবীর ‘জন্মভূমি ও প্রিয়জন’, অমর প্রকাশনী থেকে শ্যামল মিত্রের ‘আমাকে পোড়াও ও অগ্নী’ ও আহমেদ আল আমিনের ‘খলনায়ক’।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের অংশ হিসেবে সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। কবি শামীম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই আসরে প্রায় ১৩৫ জন কবি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। বিকেল ৪টায় বইমলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘অমর একুশে বক্তৃতা-২০২৪’। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। অমর একুশে বক্তৃতা দেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর। একুশের বক্তৃতা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মা. শাহাদাৎ হোসেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, শিশুসাহিত্যিক ওয়াসিফ এ খোদা, কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ এবং শিশুসাহিত্যিক ইমরান পরশ।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শনী মঞ্চে ছিল ‘প্রথম কবিতার বই: অনুভূতির দলিল’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা। অংশগ্রহণ করেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা, স্নিগ্ধা বাউল, সঞ্জয় ঘোষ, রিপন আহসান রিতু, মীর রবি, মাশরুরা লাকী ও মিনহাজুল হক। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন কবি ফারহান ইশরাক ও কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, হাসানুজ্জামান কল্লোল, আমিনুর রহমান সুলতান, হাসনাত লোকমান, বদরুল হায়দার, ফারহানা রহমান, সঞ্জীব পুরোহিত, নূর-এ-জান্নাত, শিমুল পারভীন ও আরেফিন রব। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, রূপা চক্রবর্তী এবং আহ্কামউল্লাহ। আজ মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।