মোমেনুর রশিদ সাগর (পলাশবাড়ী) গাইবান্ধা
গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌমাথা মোড় থেকে পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা সড়কে এগোতে দুই ধারে চোখে পড়বে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে সারি সারি বাসক-তুলসীগাছ। জায়গাটা পলাশবাড়ী উপজেলার মহদিপুর ইউনিয়ন। একটু পরেই যে গ্রাম পড়বে, এর নাম কেত্তারপাড়া। তবে আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে এটি ‘ঔষধি গ্রাম’ নামে বেশি পরিচিত।
এ নামের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ষাটোর্ধ্ব রফিকুল ইসলামের। এক যুগ আগে সোয়া এক শতক জমি সম্বল ছিল তাঁর। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত ছিল পুরো পরিবার। একপর্যায়ে নানা জাতের ঔষধি গাছ এবং জৈব সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বদলে গেছে রফিকুলের জীবন। তাঁর সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার দুই শতাধিক পরিবার পেয়েছে জীবিকার পথ। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সারা দেশে লক্ষাধিক উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন রফিকুল ইসলাম।
দোকানঘর নামক এলাকায় সড়কের উত্তর পাশে কেত্তারপাড়া আইসিএম কৃষক উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের কার্যালয়। ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে প্রকল্পটি। অপর পাশে জৈব সার তৈরি এবং ঔষধি গাছ কালেকশন পয়েন্ট। এ ছাড়া উপজেলার বেতকাপা ও হোসেনপুর ইউনিয়নে ছোট আরও দুটি কালেকশন পয়েন্ট রয়েছে। এলাকায় উৎপাদিত ঔষধি গাছ ও জৈব সার জমা হয় এসব পয়েন্টে। এখান থেকে স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে ঔষধি গাছ ও জৈব সার পরিবহন করে থাকেন।
এলাকার এ আমূল পরিবর্তন এসেছে কেত্তারপাড়া গ্রামের রফিকুলের হাত ধরে। বাড়ির পাশের জমিতে ঔষধি গাছ কালমেঘের জমি পরিচর্যাকালে কথা হয় রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সালেহা বেগমের সঙ্গে।
একসময় সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাত। সহায়-সম্বল বলতে পৈতৃক সোয়া শতক জমি ছাড়া কিছু ছিল না তাঁদের। ২০০৭ সালে এ পেশায় জড়িত হওয়ার পর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কঠোর পরিশ্রমে মিলেছে সফলতা। জমি কিনে বাড়ি করে সন্তানদের নিয়ে সুখে আছেন। বর্তমানে লিজ নেওয়া পাঁচ বিঘা জমিতে চলছে ঔষধি গাছ ও জৈব সার উৎপাদনের কার্যক্রম। ছেলেমেয়েরা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। একটা সময় এসব স্বপ্নের বাইরে ছিল সালেহার।
এলাকার চাষিরা ঔষধি
গাছের মধ্যে বাসক, কালমেঘ, তুলসী ও অশ্বগন্ধা বেশি চাষ করেন বলে জানান রফিকুল। এ উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ৪৫ টন ঔষধি গাছ বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাসক ৫২ হাজার, কালমেঘ ৭০ হাজার, তুলসী ৪০ হাজার ও অশ্বগন্ধা ৩ লাখ টন বিক্রি হয়ে। জৈব সারের মধ্যে রয়েছে ট্রাইকো ও ভার্মি কম্পোস্ট। বছরে জৈব সার বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টন। প্রতি টন জৈব সারের বাজারমূল্য ১০ হাজার টাকা। পার্বত্যসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তিনি প্রত্যক্ষ সহায়তা দিয়ে লক্ষাধিক উদ্যোক্তা চাষি তৈরি করেছেন। তাঁদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান রফিকুল।
পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, কৃষকদের কল্যাণে ২০০৭ সালে প্রকল্পটি চালু হলেও পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশিক্ষিত চাষি রফিকুল বিষয়টি ধরে রেখে কাজ চালিয়ে যান। পরে অনেকে এই পথে হাঁটতে থাকেন। তাঁদের বেশির ভাগই সফল হয়েছেন। রফিকুল একজন সফল কৃষক-উদ্যোক্তা। রফিকুলসহ এ পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সম্ভাব্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।