রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীতে মৌমাছির সংকটে পর্যাপ্ত পরাগায়ন না হওয়ায় পেঁয়াজ ফুল শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। এই অবস্থায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
কৃষকদের দাবি, কৃষি অফিসের কোনো সহযোগিতা ও পরামর্শ পাচ্ছেন না তাঁরা। এদিকে কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল জেলার পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই পেঁয়াজের সাদা ফুলের সমারোহ। কেউ কেউ পেঁয়াজ ফুলে ওষুধ স্প্রে করছেন, কেউ আবার আগাছা তোলার কাজ করছেন।
চাষিরা বলেন, ‘এ বছর প্রচুর খরচ হয়েছে। এক কেজি বীজ কিনতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এবার অসময়ের বৃষ্টিতে ফুল থেকে মধু ঝরে যাওয়ায় মৌমাছি বসছে না। ফলে পেঁয়াজের ফুল ভালো হলেও পরাগায়নের অভাবে বীজ হওয়ার আগেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারাও কোনো সাহায্য করছেন না।’
কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের কৃষক জলিল মোল্লা বলেন, ‘এ বছর ৪৮ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজবীজের আবাদ করেছি। পরাগায়নের অভাবে পেঁয়াজের ফুল সব শুকিয়ে যাচ্ছে। ভালো রকমের লোকসান গুনতে হবে। এখন পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তা আমাদের দুর্দশা দেখতে আসেননি।’
আরেক কৃষক আলতাব প্রামাণিক বলেন, ‘মৌমাছি না থাকায় বীজ হচ্ছে না। গত বছর এক বিঘায় যে পরিমাণ বীজ হয়েছিল, এবার চার বিঘা জমিতেও সে পরিমাণ বীজ হবে না।’
শাবানা বেগম বলেন, ‘এক কেজি পেঁয়াজের দানা পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে এবার। কিন্তু পুরো খেতের ফুল মারা যাচ্ছে। এক কেজি দানা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনে চারা দিয়েছি। এখন ফুল এভাবে নষ্ট হলে আমরা বাঁচব কীভাবে?’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস. এম. সহীদ নূর আকবর বলেন, ‘কী কারণে এমন হচ্ছে, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কৃষকদের পরামর্শের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় মাঠপর্যায়ে কাজ করেন।’
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজবীজের আবাদ হয়েছে। গত বছর ১৭৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছিল। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। এ বছর জেলায় ৯৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।