ক্রীড়া ডেস্ক
কাতার বিশ্বকাপে ‘ডার্ক হর্স’ বলা হচ্ছিল ডেনমার্ককে। ডেনমার্ক বিদায় নিয়েছে প্রথম রাউন্ডেই। তাদের জায়গায় নতুন ডার্ক হর্সের আবির্ভাব দৃশ্যপটে। এখন কালো ঘোড়ার তকমা পাচ্ছে মরক্কো। মরুতে তারা তৈরি করেছে লাল দুর্গ।
গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দেওয়ার পর বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মকে বিদায় করে দিয়েছে মরক্কো। শেষ ম্যাচে কানাডাকে বিদায় করে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবারও শেষ ষোলোয় ওঠে আটলাস লায়নরা। গত পরশু শেষ ষোলোয় মরক্কোকে ফুটবল বিশ্ব নতুন করে চিনেছে। বিশ্বকাপের শিরোপাপ্রত্যাশী স্পেনকে বিদায় করে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশটি। স্প্যানিশদের হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তারা।
আগামী শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর প্রতিপক্ষ পর্তুগাল। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত মাত্র একটি গোল হজম করেছে মরোক্কানরা। পারফরম্যান্স বলছে, শেষ আটে পর্তুগিজদের সামনে আটলাস পর্বত হয়েও দাঁড়াতে পারেন ইউসুসেফ আন-নাসেরিরা।
এই বিশ্বকাপে মরক্কোর পথচলা কোথায় গিয়ে থামবে, তা সময় বলে দেবে। তবে এই দলটি যেকোনো দলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে, এটি বলাই যায়। অ্যাফকন অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সব ম্যাচ জিতে মূল পর্বে জায়গা করেছে মরক্কো। এই রেকর্ড বিশ্বকাপে আর কোনো দলের নেই।
কয়েক বছর আগে দেশটিতে চালু হয় বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মাদ ফুটবল একাডেমি। এই আধুনিক একাডেমির নির্মাণ ব্যয় ছিল ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একাডেমির ১২টি শাখা খোলা হয়েছে মরক্কোর ১২টি অঞ্চলে। শাখাগুলো আকারে ছোট হলেও সুযোগ-সুবিধা বিশ্বমানের। এই শাখাগুলোর মাধ্যমে সারা দেশ থেকে কিশোর প্রতিভা বাছাই করে পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় একাডেমিতে।
ফিফার নারী মহাসচিব ফাতমা সামুরা বলেছেন, এই একাডেমিতে এলে মনেই হয় না আফ্রিকার কোনো দেশে আছি। এই একাডেমি মরক্কোর জন্য একটি রত্ন। তিনি আফ্রিকার অন্য দেশগুলোকে মরক্কোর মডেল অনুসরণের পরামর্শ দেন।
মরক্কোর ভালো করার একটি বড় কারণ হলো, দলে একঝাঁক অভিবাসী ফুটবলার রয়েছেন। মরক্কোর বড় তারকা আশরাফ হাকিমির জন্ম স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের হেতাফেতে। হাকিম জিয়েশের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নেদারল্যান্ডসে। বেলজিয়ামে জন্ম নেওয়া চার ফুটবলার আছেন দলে। তাঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন স্থানীয় প্রতিভাবান ফুটবলাররাও। স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে মরক্কোর জয়ের নায়ক ইয়াসিন বুনু। তাঁর জন্ম কানাডায়।
মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের জন্মও ফ্রান্সে। তিনি একসময় খেলেছেন মরক্কোর হয়ে। রেগরাগুই জানিয়েছেন, জাতীয়তা নিয়ে তাঁকে অনেক কথা শুনতে হয়। তবে এই মিশ্রণে তিনি খুশি, ‘এটা ভালো যে খেলোয়াড়েরা জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণ করেছে। প্রতিটি দেশেই একটি ফুটবল সংস্কৃতি রয়েছে। আমরা একটি মিশ্রণ তৈরি করেছি এবং আমি এতে খুব খুশি। আমি পাত্তা দিই না।’
বিশ্বজুড়ে মরক্কোর অনেক সমর্থক রয়েছে। সমর্থকদের প্রতি রেগরাগুইয়ের অনেক ভালোবাসা। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এই ভক্তদের ছাড়া এটি করা অসম্ভব।
কোয়ার্টার ফাইনালে ইতিহাস গড়তে তাদের সমর্থন প্রয়োজন।’