সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
গত দুই দিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত বিঘা জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আমনচাষিদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি ও আলুচাষিরা। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলে ফসলের মাঠে পানি বেশি দিন জমে থাকতে পারবে না। তাই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।
গত সোমবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জেলার শতাধিক হেক্টর জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে এসব ধান কেটে ঘরে তুলতেন কৃষকেরা। এখন বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, দৌলতপুর, বেগুনবাড়ি, সালান্দরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আধা-পাকা ধানের গাছ ও সবজিখেত পানিতে ডুবে আছে। অনেক কৃষক মাটিয়ে নুয়ে পড়া ধানগাছ গোছা বেঁধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।
সদর উপজেলার ধন্দোগাঁও এলাকার কৃষক মুসলিম উদ্দীন ও বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আবু তালেব জানান, আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই খেতের ধান পাকতে শুরু করবে। কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ৭০-৮০ শতাংশ জমির আমন ধান মাটিতে হেলে পড়েছে।
সালান্দর এলাকার কৃষক বাহার উদ্দীন বলেন, কয়েক দিন পর নুয়ে যাওয়া ধানগাছে পোকার আক্রমণ শুরু হবে। পরে ধানের পরিবর্তে শুধু চিটা পাওয়া যাবে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে আগাম ব্রি সুমন স্বর্ণা জাতের ধান লাগিয়েছি। মাঠে ধান পেকে গেছে। দু-এক দিন পর ঘরে তুলব। অসময়ের বৃষ্টিতে পাকা ধান নুয়ে পড়েছে। এতে ধান তুলতে পারলেও গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।’ বেলাল জানান, সার ও কীটনাশকসহ বিঘাপ্রতি এবার খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা। এখন লোকসান হবে ৮-১০ হাজার টাকার মতো।
হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী এলাকার ইয়াকুব আলী বলেন, ‘১০ কাঠা জমিতে আমন চাষ করেছি। এখন আমনখেত পানিতে তলিয়ে আছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সব ধান পচে যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা হয়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে। তবে পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। বৃষ্টি কমলে কৃষকেরা ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। অন্যদিকে যেসব জমির ধানে সবেমাত্র শিষ এসেছে বা বের হয়নি, ওই জমির ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। পাশাপাশি আলুখেতে পানি জমে থাকায় চাষিরা কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান উপপরিচালক আবু হোসেন।