সম্প্রতি ‘একুশে পদক-২০২৪ ’-এর জন্য মনোনীতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সংগীতে একুশে পদক পেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। শুভ্র দেব এই পুরস্কার পাওয়ায় আপত্তি তুলেছেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতজ্ঞ প্রিন্স মাহমুদ। তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন শুভ্র দেব। তিনি দাবি করেছেন, সংগীত অঙ্গনে তাঁর যে অবদান, তাতে আরও আগেই তিনি এই সম্মাননা পেতে পারতেন। এ নিয়ে দুই শিল্পীর বাহাস এখন তুঙ্গে।
ফেসবুকে প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘দেশের সংগীতে শুভ্র দেবের অবদান আছে, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি অবদান লাকী আখান্দ্, আইয়ুব বাচ্চু, ফোয়াদ নাসের বাবু, নকীব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, হামিন আহমেদ, মাকসুদুল হক, মাহফুজ আনাম জেমস এবং প্রিয় গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরী ও শহীদ মাহমুদ জঙ্গির। প্রিয় শুভ্র দেবের উচিত এই প্রসঙ্গে কথা বলা। নিজে পদক না গ্রহণ করে সত্যিকার মেধাবীকে পদক দিতে বলার এই সংস্কৃতি এখনই শুরু হোক।’
প্রিন্স মাহমুদের এই স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আজকের পত্রিকাকে শুভ্র দেব বলেন, ‘আমি ইন্ডাস্ট্রিতে যা দিয়েছি, এমনটা খুব কম শিল্পীর কন্ট্রিবিউশন আছে। শুধু গান গাইলেই হয় না। বাংলা গানের শিল্পী হিসেবে আমি প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে (পেপসির) ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে কাজ করেছি।
বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায়, তখন বাংলাদেশের শিল্পী হিসেবে প্রথম থিম সং করেছি। শুধু তা-ই নয়, দেশের প্রথম পুরুষ শিল্পী হিসেবে বলিউডের মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে আমন্ত্রণ পেয়েছি। এ ছাড়া মাত্র ১২ বছর বয়সে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। মাদার তেরেসাসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছি। বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে তুলতে আমি নিরলস কাজ করেছি। তাই যাঁরা আমার কাজ সম্পর্কে জানেন, তাঁরা বেশির ভাগই আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এই পদক অনেক আগেই আমার পাওয়া উচিত ছিল।’
জুনিয়ররা অনেকে অনেক কিছু বলে ফেলে, আমি এগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখি। আমার মনে হয়, তিনি কারও ইন্ধনে এমন কথা বলেছেন। নইলে এমন কথা কীভাবে তিনি বলেন! —শুভ্র দেব, সংগীত শিল্পী
প্রিন্স মাহমুদের দেওয়া স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে অভিমত জানতে চাইলে শুভ্র দেব বলেন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা তো আমার লেভেলের (সমসাময়িক) না। তিনি (প্রিন্স মাহমুদ) তো আমার গানের জন্য বাসায় এসে বসে থাকতেন। কদিন আগেও তিনি আমাকে গানের জন্য ফোন করেছেন। আজকে যদি সৈয়দ আব্দুল হাদী, রুনা লায়লার মতো শিল্পীরা কিছু বলতেন, তাহলে হয়তো আমি ভাবতাম। জুনিয়ররা অনেকে অনেক কিছু বলে ফেলে, আমি এগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখি। আমার মনে হয়, তিনি কারও ইন্ধনে এমন কথা বলেছেন। নইলে এমন কথা কীভাবে তিনি বলেন!’
শুভ্র দেব বলেন, ‘আমাকে যখন ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করেছিল, তখন বম্বের আমির খান আর পাকিস্তানের একজন ব্যান্ড তারকা হারুনকে অ্যাম্বাসেডর করেছিল। শুধু গাইলেই তো হবে না, আমি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী হিসেবে যতটা কাজ করেছি, তা হয়তো এখনকার অনেকে জানে না।’
যাঁদের অবদান অনেক, সিনিয়র অনুযায়ী তাঁদের সম্মাননা দেওয়া উচিত। আলাউদ্দীন আলী এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রাপ্য। খুশি হয়েছি মরণোত্তর হলেও এন্ড্রু কিশোরকে পদক দেওয়া হয়েছে। —প্রিন্স মাহমুদ, সুরকার
এ বিষয়ে প্রিন্স মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার যা বলার, সেটা তো আমি বলেই দিয়েছি। এ নিয়ে নতুন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি কাউকে ছোট করার জন্য মন্তব্য করিনি। অবদান বোঝাতে নামগুলো আমি প্রতীকী অর্থেই ব্যবহার করেছি। আমার মনে হয়েছে, সংগীতে যাঁদের অবদান অনেক, সিনিয়র অনুযায়ী তাঁদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো উচিত।
আলাউদ্দীন আলী এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রাপ্য। আমি খুব খুশি হয়েছি মরণোত্তর হলেও এন্ড্রু কিশোরকে পদক দেওয়া হয়েছে। আরও ভালো লাগবে এবং অনুপ্রেরণা পাব জীবিত অবস্থায় যদি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম এবং গীতিকার রফিকউজ্জামানকে এই পদক দেওয়া হয়।’