হোম > ছাপা সংস্করণ

দুবলার চরে ‘সাহেব’রাই সব

এস এস শোহান, বাগেরহাট

শুঁটকি তৈরির জন্য বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন দুবলার চরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরেন জেলেরা। জনশূন্য এই চরে এক আজব নিয়ম রয়েছে। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে চরে আসার পরই মাছের নিয়ন্ত্রণ হারান জেলেরা। দুবলাসহ কয়েকটি চরের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন ‘সাহেব’ নামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।

সাহেবদের কাছে জিম্মি হয়ে উপযুক্ত দামের থেকে কম দামে জেলেদের মাছ বিক্রি করতে হয় বলে অভিযোগ। কোন জেলের মাছ কার কাছে বিক্রি হবে; সবই নির্ধারণ করেন সাহেবেরা। মুখ খোলার সাহস নেই। সাহেবদের অবাধ্য হওয়ারও সুযোগ নেই হতদরিদ্র জেলেদের।

তবে মাঝে মাঝে কিছু জেলে নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেন। তবে প্রতিবাদী সেসব জেলেদের পরিণাম শেষ পর্যন্ত খুব একটা সুবিধার হয় না। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে দুবলার চরে। প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর কাছে কম দামে মাছ বিক্রি না করায় সাগরে মাছ ধরার অনুমতি হারিয়েছেন রামপালের তিন জেলে। মাছ ধরার অনুমতি পেতে তিন জেলে ও তাঁদের পরিবার বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিলেও অনুমতি মিলছে না। উপরন্তু মামলা হয়েছে প্রতিবাদী জেলেদের নামে।

প্রতিবাদ করে মাছ ধরার অনুমতি হারিয়েছেন তিন ভাই সফরুল শেখ, নজরুল শেখ ও ইমরান শেখ। তাঁদের বাড়ি রামপালের পেরিখালী গ্রামে। ২৫ বছর ধরে সুন্দরবনে মাছ ধরেন তাঁরা।

ভুক্তভোগী সফরুল শেখ বলেন, টানা চার দিন সাগরে মাছ ধরে গত ১৩ ডিসেম্বর সকালে অন্য জেলেদের সঙ্গে চরে ফেরেন। ওই দিন মো. সুলতান মাহমুদ পিন্টু সাহেব ও আমানত সাহেব তাঁর মাছ কিনতে আসেন। মাছের দাম খুব কম বলছিলেন তাঁরা। কম দামে মাছ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের সঙ্গে তর্ক হয়। একপর্যায়ে আরও চারজনকে ডেকে জোর করে তাঁদের মাছ নিয়ে যাওয়া শুরু করেন। তাঁরা বাধা দিলে হাতাহাতি হয়।

একপর্যায়ে জেলেদের হস্তক্ষেপে মাছ রেখে তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান অভিযুক্তরা। এরপর ২৩ ডিসেম্বর মো. সুলতান মাহমুদ পিন্টু সাহেবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড মাহমুদ ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার মো. ইমরান গাজী বাপ্পী বাদী হয়ে তিনিসহ নয়জনের নামে শরণখোলা থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সফরুল শেখ, নজরুল শেখ, ইমরান শেখ, রেজাউল শেখ, আব্দুর রাজ্জাক, ফখরুল শেখ, টোকন শেখ, সোহেল শেখ ও রেজাউল মৃধা। মামলায় জামিন নিয়ে ২৭ ডিসেম্বর তাঁরা সাগরে যান। কিন্তু তাঁদের মাছ ধরতে না দিয়ে বন বিভাগের লোকজন তাঁদের ঘরগুলো ভেঙে দেন। তাঁদের মাছ ধরার অনুমতি নেই বলে জানান বনরক্ষীরা।

সফরুল শেখ বলেন, ‘জেলেদের পরামর্শে পিন্টু সাহেবের হাত-পা ধরে মাপ চাই। দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছেও যাই। তিনি বিচার বসিয়ে আমাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। গরিব মানুষ অত টাকা কই পাব, এসব না ভেবে বিচার মেনে আবার চরে ফিরে আসি। কিন্তু প্রায় এক মাস চারদিকে ঘুরছেন, আমাদের মাছ ধরতে দিচ্ছে না। আমাদের খাওয়া-দাওয়াও প্রায় বন্ধ।’

সফরুল আরও বলেন, ‘আমাদের নামে মামলাও চলছে, এখানে ঘরও তৈরি করতে দিচ্ছে না। বন বিভাগের লোকেরা চলে যেতে বলে সব সময়। মাছ ধরতে না পারলে, না খেয়েই মরা ছাড়া উপায় থাকবে না। মহাজনের ঋণ কীভাবে শোধ করব? আয় না করে বাড়ি ফিরলে বাচ্চাদের কী খাওয়াব? সংসার কীভাবে চালাব? বিনা অপরাধে আজ আমরা এতগুলো লোক মরতে বসেছি। গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই।’

সফরুল শেখের ভাই নজরুল শেখ বলেন, মারামারির দেড় মাস পরেও তাঁরা মাছ ধরতে পারছেন না। শুধু তাঁরা নয়, তাঁদের সঙ্গে চুক্তিতে আসা ১১ জেলেরও মাছ ধরা বন্ধ। তাঁদের চুক্তির টাকাও দিতে পারছেন না। সাত-আট লাখ টাকা ধার করে সাগরে গেছেন, তাঁরাও চাপ দিচ্ছেন।

সফরুলের সঙ্গে চুক্তিতে মাছ ধরতে যাওয়া রাসেল খা বলেন, জোর করে মাছ নেওয়ায় বাধা দেওয়াতেই তাঁদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এত কষ্ট করে খেয়ে-না খেয়ে মাছ ধরেন। সেই মাছ জোর করে নিয়ে যাবে; এ কি সহ্য করা যায়?

রামপালের পেড়িখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য শেখ মুরাদুল হক বলেন, সফরুল, নজরুল ও ইমরান খুবই গরিব। হতদরিদ্র এই জেলেদের দুরবস্থার বিষয়টি তিনি বন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে তুলে ধরেছেন। তারপরও কোনো উপকার হয়নি। মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও পুনরায় জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মাছ ব্যবসায়ী ও ফিশারম্যান গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান মাহমুদ পিন্টু বলেন, দাম নিয়ে মতবিরোধের জেরে তাঁর ক্রেতা জনি ও তাহেরকে মারধর করে বনের মধ্যে ফেলে রাখে সফরুল ও তাঁর লোকজন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সুলতান মাহমুদ পিন্টু আরও বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন চর থেকে কারও সাহস নেই একটি মাছ বিনা পয়সায় নিয়ে আসে। এখন তাঁরা দোষ ঢাকতে অনেক কিছুই বলছে। তবে আমরাও চাই জেলেরা ভালো থাকুক, এই আয়ের ওপরেই তো ওঁদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁদের তো আইনের মধ্যে থাকতে হবে।’

দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৩ ডিসেম্বর তাঁরা মাছ ক্রেতাদের একজনকে মেরেছে। এই অপরাধের জন্য বন বিভাগ এ বছর তাঁদের মাছ ধরার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দুবলার চরে কম দামে মাছ কেনার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, বনে জেলেদের মারধরের ঘটনায় নয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে মারামারির ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এর আগে বনে এমন ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সতর্ক করতে অভিযুক্তদের এ বছর বনে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

কোন আইনের ভিত্তিতে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি কেড়ে নেওয়া হলো, এমন প্রশ্নে ডিএফও মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘কোনো আইন নেই। মারামারি করেছে, তাই বের করে দেওয়া হয়েছে। তা না হলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে।’

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন