ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন মো. কামরুজ্জামান। এরপরও তাঁর মুখে হাসি নেই, বরং রাজ্যের দুশ্চিন্তা। উচ্চশিক্ষার আশা তাঁর পূরণ হবে তো—এই শঙ্কায় কাটছে দিন। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতছানি রুখে দিতে পেছেন থেকে তাঁকে টেনে ধরছে পরিবারের অনটন।
কামরুজ্জামান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাতৃগাঁও গ্রামের বর্গাচাষি মোখলেসুর রহমান ও কামরুন নাহারের ছেলে। স্কুলজীবন থেকেই মেধাবী ছাত্র কামরুজ্জামান এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। সংসারে চরম আর্থিক কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে তাঁকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৬৭তম স্থানে রয়েছেন কামরুজ্জামান। একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে কামরুজ্জামানের ইচ্ছে জাহাঙ্গীরনগরে পড়ার।
কামরুজ্জামানের পরিবারের পক্ষে কখনোই তাঁর শিক্ষার খরচ বহন করা সম্ভব হয়নি। স্কুল ও কলেজজীবনে শিক্ষকেরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। বই কিনতে না পারায় শিক্ষকেরা ও এক ফুফাতো ভাই বই ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখি কোনো একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। সাফল্যও এসেছে। কিন্তু এখন আর্থিক দৈন্যের কারণে সে ইচ্ছে পূরণ হবে কি না, জানি না। কোথায় পাব টাকা, কে দেবেন টাকা? কে চালাবেন পড়ার খরচ।’
কামরুজ্জামানের বাবা মোখলেসুর রহমান ১০ বছর আগেই স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। চলাফেরা করতে অক্ষম মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘অভাবী সংসারে আমাদের কোনোরকমে খাবার জোটে। বাড়তি কোনো টাকা নেই যে সেই টাকা দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করাব। নিজের জমিজমা নেই। কয়েক শতক জমির ওপর বাসতভিটা। ছেলের পড়াশোনায় খরচ জোগান দিতে না পেরে খুব কষ্ট লাগছে।’
কামরুজ্জামানের মা কামরুন নাহার বলেন, অন্যের বর্গা জমি চাষবাস করে যা পাই তা দিয়ে কোনোরকমে চলে সংসার। অভাব-অনটন লেগেই আছে সংসারে। শৈশব থেকেই অভাব-অনটনের মধ্যে দুই সন্তানকে বড় করছি। ছোট ছেলেটা স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। এখন নিরুপায় হয়ে আছি। কোনোভাবেই ছেলের ভর্তিসহ অন্যান্য খরচ বহনে টাকা জোগাড় করতে পারছি না। কিছু নেই যে তা বিক্রি করব।’
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ই হাবীব বলেন, ‘ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী, এখন তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের দরিদ্রতা। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতো সে।’
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলেটির উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন সফল করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’