আজাদুল আদনান, ঢাকা
রোগনির্ণয়ের অত্যাধুনিক একটি পরীক্ষাপদ্ধতি ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)। শরীরের ভেতরের কোনো অঙ্গের স্পষ্ট ছবি পেতে এ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই করাতে আসেন রোগীরা। কিন্তু দেড় বছর ধরে হাসপাতালে থাকা যন্ত্রটি অকেজো পড়ে আছে। ফলে তিন-চার গুণ টাকা খরচ করে ভোগান্তি নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাপানি কোম্পানি হিটাচির ইসিলোন মডেলের এমআরআই মেশিনটি ১৮ কোটি টাকায় কেনা হয়। চালুর মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০২০ সালের শুরুতেই যন্ত্রটি বিকল হয়ে পড়ে। তখন সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি (সিএমসি) অনুযায়ী মেরামত বাবদ ৩২ লাখ টাকা নিলেও যন্ত্রটি ঠিক করতে পারেনি মেডিটেল। এর পর থেকে কোম্পানি ও সরকারের মধ্যে দর-কষাকষির জটিলতায় থেমে আছে মেরামতকাজ।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেশিনটি যখন নষ্ট হয়, তখন কোম্পানিকে আমরা ডেকেছি। তারা জানায়, ঠিক করতে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা লাগবে। ৫০ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোম্পানি এতে রাজি না হওয়ায় গত অর্থবছর সেটি বাতিল করা হয়। এখন বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও নিমিউ অ্যান্ড টিসি দেখছে।’
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল নিমিউ অ্যান্ড টিসি স্বত্বাধিকারী কোম্পানি মেডিটেলকে চিঠি দেয়। এরপর তিন বছরের জন্য যন্ত্রটি সচল করতে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেয় মেডিটেল। সেই দর নাকচ করে সরকার। পরে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা কমিয়ে ৫ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রস্তাব দেয় কোম্পানিটি। ১৯ এপ্রিল জরুরি বৈঠকে বসে নিমিউ অ্যান্ড টিসি। সেই সভায় মেরামত বাবদ ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় সরকার। সেই সিদ্ধান্তের চিঠি গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্কয়ার হাসপাতাল, ল্যাব এইড, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইবনে সিনার মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে ইউরোপীয় কোম্পানি সিমেন্সের এমআরআই মেশিন। এসব হাসপাতালে মেরামতের জন্য এমআরআই মেশিনের পেছনে বছরে ১ কোটিরও কম টাকা লাগে। সেখানে প্রায় দ্বিগুণ দর দিচ্ছে মেডিটেল।
স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তা ফারুক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পর্যন্ত মেরামত করে দেওয়া। এরপর করতে হলে বাজারদর অনুযায়ী করাতে হবে।’
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে মাগুরা থেকে বাবাকে নিয়ে তিন সপ্তাহ আগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসেন মমিনুল। কিন্তু এমআরআই না থাকায় বেসরকারি হাসপাতাল নিউ কেয়ারে ৯ হাজার টাকায় বাবার চিকিৎসা করান তিনি।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমাজিং বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দেড় বছর ধরে যন্ত্র নষ্ট। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিষয়টি আমি জানতে পারি। করণীয় ঠিক করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’