নাজিম আল শমষের, ঢাকা
২০০৫ থেকে ২০২২—গত ১৭ বছরে বাফুফে জাতীয় দলের কোচ বদলেছে ২৬ বার। কোচের সংখ্যা নেহাত কম নয়, ২২ জন। কোচ বদলের নাটকগুলোর এক নীরব সাক্ষী আছে বাফুফেতে—চার চাকার একটি গাড়ি ও তাঁর চালক।
সাদা রঙের টয়োটা স্টেশন ওয়াগন। বয়সের ভারে ধুঁকছে। জাতীয় দলের কোচদের যাতায়াতের জন্য বরাদ্দ এই গাড়ির ‘ডিউটি’ শুরু আর্জেন্টাইন আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানিকে দিয়ে। ব্রাজিলিয়ান ডিডো, লোডভিক ডি ক্রুইফ হয়ে সর্বশেষ এই গাড়িতে সওয়ার হয়েছেন পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৪ বিদেশি কোচকে যাত্রী হিসেবে পেয়েছে গাড়িটা। তালিকায় আছেন দেশি কোচরাও। হাসানুজ্জামান বাবলু থেকে মারফুল হকরাও ছিলেন তালিকায়। সাইফুল বারি টিটু ও লোডভিক ডি ক্রুইফ তিন দফায় দায়িত্ব সামলেছেন বাংলাদেশের। প্রতিবারই তাঁদের জন্য বরাদ্দ নির্দিষ্ট এই গাড়িটিই।
২০০৫ থেকে কোচদের খুব কাছ দেখে গেছেন গাড়িটির চালক মো. মহসীন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই টিম অ্যাটেনডেন্ট কোচদের আনা-নেওয়া করেছেন, থেকেছেন পাশে পাশে। মহসীনই জানালেন, মাঠে-ঘাটে যেমনটা কড়াই হোন না কেন, গাড়িতে ওঠার পর সব কোচই হয়ে যেতেন শিশুর মতো। কোচদের হাসিমুখ যেমন দেখেছেন মহসীন, তেমনি দেখেছেন ক্ষোভ আর অভিমান নিয়ে অশ্রুসিক্ত বিদায়। গত ১৭ বছরে অধিকাংশ বিদেশি কোচের বাংলাদেশ পর্ব শুরু আর শেষটাই হয়েছে এই গাড়িতে চড়ে। বিমানবন্দর থেকে তাঁদের অভিনন্দন আর বিদায়ী সম্ভাষণ দেওয়ার কাজটা এত দিন পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই করে গেছেন মহসীন।
তবে এবার ব্যতিক্রম হতে চলেছে। বাংলাদেশের ২৩তম বিদেশি কোচ হয়ে এসেছেন হাভিয়ের কাবরেরা। মহসীনের গাড়িতে চড়ে কাবরেরার নতুন অধ্যায় শুরুর কথা থাকলেও সেই দায়িত্ব এখন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। কাবরেরার আসা-যাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সতর্ক দৃষ্টি এই ব্রিটিশের!
কোচ আর জাতীয় দল নিয়ে সারা বছর ব্যস্ত সময় পার করা মহসীন ও তাঁর সাদা গাড়িটার এখন অখণ্ড অবসর। এতে মন খারাপ করছেন না মহসীন। তাঁর বিশ্বাস, দ্রুতই গাড়িটা নিয়ে আবার ফিরতে পারবেন জাতীয় দলের দায়িত্বে। কোনো একদিন এই গাড়িতে পাবেন এমন এক জাদুকরকে, যিনি দেশের রুগ্ণ ফুটবলে একটু অক্সিজেন সরবরাহ করবেন।