সিলেট প্রতিনিধি
সিলেট নগরীর গোয়াবাড়ি এলাকার ঐশী রায়। প্রতি সপ্তাহে ৫ থেকে ১০ কেজি করে চাল কেনেন। গতকাল বুধবার চাল কিনতে গিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায় তাঁর। কারণ, এক সপ্তাহ আগে যে চাল ৫২ টাকা কেজিতে কিনেছেন, সেই চালের দাম এখন ৬০ টাকা।
ঐশী রায় বলেন, ‘এখন ধানের সময়। বছরের অন্য সময় চালের দাম বাড়লেও এই সময় কখনো চালের দাম বাড়তে দেখিনি। আমরা দিন আনি দিন খাই। চালের বস্তা কেনার সামর্থ্য নাই। কিন্তু চালের যে দাম বেড়েছে তাতে মনে হচ্ছে কয়দিন পরে কেজি হিসাবেও চাল কিনতে পারব না।’
সারা দেশের মতো সিলেটেও অস্থির চালের বাজার। খুচরা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী সবাই নিজেদের মতো করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। সম্প্রতি সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অজুহাতেও চালের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রকারভেদে প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে নগরীতে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অধিক দামে চাল বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন। গতকাল বুধবার নগরীর কালীঘাট এলাকার পাইকারি ও খুচরা চালের দোকানে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত নগরীর কালীঘাটে পাইকারি ও খুচরা চালের দোকানে অভিযান চালায় প্রতিষ্ঠানটি। অভিযানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, তালিকায় প্রদর্শিত মূল্য ও প্রকৃত বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকা এবং পাকা রসিদ সংরক্ষণ না করায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ। অভিযানে সহযোগিতা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৯) একটি টিম।
জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, কালিঘাটের মেসার্স সোলেমান ট্রেডার্স, মেসার্স মখদ্দস অ্যান্ড জাকির ট্রেডার্স, মেসার্স খালেদুস সামাদ ট্রেডার্স, মেসার্স আমিনুর রশিদ ট্রেডার্স এবং মেসার্স মতিউর রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স ট্রেডার্স। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ধানের ভরা মৌসুমেও চালের দাম চড়া থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে বিশেষ অভিযান চালানোর কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে করপোরেট ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁরা চালের কারবারে নেমেছেন তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছেন তিনি। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে চালের বিষয়ে এসব নির্দেশ দেন তিনি।