রুদ্র রুহান, বরগুনা
‘এক সপ্তাহ ধইর্যা গাঙ্গে জাল পাতি, হুদা জাল ওডে, মাছ আর ওডে না। কদিন পর আবার অবরোধ শুরু অইবে। মোরা কী খাইয়া বাঁচমু।’ মাছ শিকারের জন্য বিষখালী নদীতে জাল পেতেছিলেন চার জেলে। শূন্যহাতে ফিরে নৌকা নোঙর করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন তাঁদের একজন ইলিয়াস আকন।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ কুপদোন গ্রামের জেলে ইলিয়াস আকন নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনিসহ আশপাশের জেলেরা পায়রা, বলেশ্বর, বিষখালী নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় মাছ শিকার করেন। এঁদের বলা হয় প্রান্তিক জেলে।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, বরগুনা জেলায় মোট ১৭ হাজার ৬৩৫ হেক্টর নদ-নদী ও মোহনা রয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার প্রান্তিক জেলে এসব উন্মুক্ত জলাশয়ে (নদ-নদী ও মোহনা) মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তবে বছরজুড়ে ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞায় বিরতি নিতে হয়। স্থানীয় জেলেরা জানান, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে তাঁদের ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়। অক্টোবরে মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলে ইলিশের অভয়াশ্রমে ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় আট মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার বাইরে মাছ শিকারের জন্য যে সময় থাকে তখন মাছ পাওয়া না গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে
দিন কাটাতে হয়।
বরগুনা সদর উপজেলার বরইতলা এলাকার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৬৫ দিনের অবরোধের পর প্রায় দুই-আড়াই মাস বিষখালী নদীতে যে মাছ পাইছি তা বিক্রি করে ধার শোধ করেছি। আবার ২২ দিনের অবরোধের সময় চলে আসছে। এক সপ্তাহ ধরে নদীতে কোনো মাছ পাই না। এখন পরিবার নিয়ে দুই বেলা খেয়ে বাঁচাই কষ্টকর।’
জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক দফাদার বলেন, কয়েক দিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা নদীতে ইলিশ পাচ্ছেন না। সাগরেও তেমন ইলিশ নেই।