জিয়াউল হক, যশোর
সারা দেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু প্রায় এক বছর পূর্ণ হতে চললেও যশোরে দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে ৩৭ শতাংশ।
শত ভাগ টিকা নিশ্চিতে হিমশিম পরিস্থিতির জন্য জনসাধারণের অনীহা এবং লোকবল সংকটকে দায়ী করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন উপজেলায় বারবার খুদেবার্তা, মসজিদে মাইকিং এবং গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি পালন করেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না।
যশোরের সিভিল সার্জনের মুখপাত্র ডা. রেহেনেওয়াজ বলেন, ‘যশোরের ৮টি উপজেলায় ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে, যা জেলার গড় জনসংখ্যার হিসেবে ৩৭.১৭ শতাংশ। আর প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫২.৪৬ শতাংশ মানুষ। সব মিলিয়ে জেলায় ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬০ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২২ লাখ ১৬ হাজার ৮৩ জন প্রথম ডোজ এবং ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৩ হাজার ৮২৯ জন বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।’
যশোর সদর: যশোর সদর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর মো. আবু মাউদ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত সদরের ৫২ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম টিকা নিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৭ শতাংশ। প্রতিদিনই এই টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
মনিরামপুর: মনিরামপুরে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। সেই হিসাবে এ উপজেলায় টিকার আওতায় এসেছেন ৪৮ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া ১২-১৭ বছর বয়সী স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. অনুপ বসু এসব তথ্য জানান।
চৌগাছা: চৌগাছার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার। সে হিসাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ হিসেবে এক লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ ব্যক্তিকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ উপজেলায় এক লাখ ৬২ হাজার ব্যক্তি টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার হার ৮৩.৫৪ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ব্যক্তি। সে অনুযায়ী চৌগাছার ৫৭.২৪ শতাংশ টিকা সম্পন্ন হয়েছে।
ঝিকরগাছা: ঝিকরগাছায় করোনা টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ জন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৬ হাজার ১০ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তাদের ৮৮ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে।
কেশবপুর: কেশবপুরে লক্ষ্যমাত্রার ৬২ শতাংশ ব্যক্তি করোনার টিকা পেয়েছেন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ২ লাখ ২ হাজার ৩০০ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার পর্যন্ত উপজেলার ১ লাখ ৮০ হাজার ব্যক্তি প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ২০২ জন।
অভয়নগর: অভয়নগরে করোনার টিকা দিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ টিকার আওতায় এসেছেন। সেই হিসাবে উপজেলাটিতে করোনার টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে ৬১ শতাংশ।
বাঘারপাড়া: বাঘারপাড়ায় টিকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৫৮ শতাংশ মানুষবে টিকার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
শার্শা: শার্শায় লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের। সেই হিসাবে উপজেলায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ৫৭ শতাংশ।
যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘জেলার প্রতিটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’