হোম > ছাপা সংস্করণ

রাজবাড়ী হানাদারমুক্ত হয় আজ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়েছিল দুদিন পর। ১৮ ডিসেম্বর, এই দিনে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে পাক বাহিনী রাজবাড়ী ছেড়ে চলে গেলেও বিহারি ও মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সাত দিন সম্মুখযুদ্ধ চলে। ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে বিহারিরা আত্মসমর্পণ করার পর রাজবাড়ীকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্রসহ রাজবাড়ীতে প্রবেশ করে। ওই মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য কয়েকটি সেতু উড়িয়ে দেয় এবং রাস্তা ভেঙে দেয়।

এরপর মুক্তিযোদ্ধারা একে একে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্পগুলো দখল করতে থাকে। ২২ নভেম্বর এমনই একটি অপারেশন চালানোর সময় মুক্তিযোদ্ধা খুশী শহীদ হন। পাক সেনা ও তাদের দোসররা তার লাশ ট্রাকের সঙ্গে বেঁধে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে শহর জুড়ে বিজয় উল্লাস করে। এ ঘটনায় রাজবাড়ী জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা কিছুটা কমে যায়। এই সুযোগে স্থানীয় বিহারি ও রাজাকাররা ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ও বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে।

রাজবাড়ীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ আরও বেগবান করার জন্য যৌথ কমান্ড গঠন করে পাক সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর সকল ইউনিট ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। তবে প্রায় পাঁচ হাজার সশস্ত্র বিহারির সঙ্গে তখনো মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ চলছিল।

এ সময়ে যশোর থেকে আকবর হোসেনের নেতৃত্বে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজবাড়ী এসে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশ শত্রুমুক্ত হলেও রাজবাড়ী তখনো ছিল বিহারিদের শক্ত ঘাঁটি। এ কারণে তাঁরা শহরের প্রধান প্রধান এলাকা, নিউ কলোনি ও লোকশেড কলোনিতে বড় বড় বাংকার তৈরি করে ছয় মাসের খাবার এবং গোলাবারুদসহ অবস্থান নেয়।

রাজবাড়ীতে অবাঙালিদের প্রধান সৈয়দ খামার ঈশ্বরদী ও সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত প্রায় ১০ হাজার অবাঙালি বিহারিদের এনে নিউ কলোনি এবং লোকশেড কলোনিতে জড়ো করেন। পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করে শত্রুবাহিনী দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তোলে।

সারা দেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উল্লাস করছে, সৈয়দ খামারের জল্লাদ বাহিনী তখনো স্টেশন রোডের টর্চার সেলে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরপর রাজবাড়ীর আকুয়ার বিল্ডিংয়ে নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে অত্যাচার করা হতো। অনেককে জবাই করেও হত্যা করা হয়েছে।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আশপাশের প্রায় সব এলাকা শত্রুমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ী থানা, পুলিশ ক্যাম্প ও ট্রেজারি অফিস লুট করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করলেও শহরের উত্তর দিকে রেলওয়ে নিউ কলোনি ও লোকশেড কলোনি দখলে আনতে পারছিল না।

অবশেষে মাগুরার ক্যাপ্টেন জামান বাহিনী, শ্রীপুরের আকবর বাহিনী, মাচপাড়ার মতিন বাহিনী, পাংশার মালেক ও কমান্ডার সাচ্চু বাহিনী এবং গোয়ালন্দ মহকুমা কমান্ডার শহীদুন্নবী আলমের বাহিনী যৌথভাবে শহরের চারদিক থেকে বিহারিদের কথিত মিনি ক্যান্টনমেন্ট নিউ কলোনি, আটাশ কলোনি ও লোকশেড কলোনির ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়।

১৪ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার আক্রমণের মধ্য দিয়ে শহীদ রফিক, শফিক, সাদিক, শুকুর, দিয়ানত, জয়নাল মোল্লা, আরশেদ আলী, জাহাঙ্গীর এবং আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধার জীবনের বিনিময়ে অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে শত্রুমুক্ত হয় রাজবাড়ী।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাকাউল আবুল হাসেম বলেন, রাজবাড়ী স্বাধীন হতে দুদিন সময় বেশি লেগেছিল। এটি বিহারিদের কারণে। বিহারিরা এখানে সংখ্যায় বেশি ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম ছিল। ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ যুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে বিহারিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন