ড. মুহাম্মদ ইউছুফ
হিংসা মানুষের অত্যন্ত নিন্দনীয় অভ্যাস। আরবিতে বলা হয় হাসাদ। ইসলামের পরিভাষায় অন্যের সুখ-সম্পদ, শান্তি-সাফল্য ধ্বংস হয়ে নিজে তার মালিক হওয়ার কামনাকে হাসাদ বা হিংসা বলে। সামাজিক শান্তির জন্য যেসব সৎ গুণ দরকার, হিংসা তা ধ্বংস করে। হিংসুক ব্যক্তি নিজেকে বড় মনে করে, নিজের স্বার্থকেই সবচেয়ে বড় করে দেখে। সে অন্যকে ঘৃণা করে, অন্যের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে, অন্যের অনিষ্ট কামনা করে। এতে সমাজের ঐক্য, সংহতি বিনষ্ট হয়, শান্তিশৃঙ্খলা ব্যাহত হয়।
হিংসার ফলে জাতির মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য দেখা দেয়, শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। মুসলিম জাতির ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের আগের জাতিগুলোর মুণ্ডনকারী (ধ্বংসকারী) ব্যাধি ঘৃণা ও হিংসা তোমাদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে। আমি চুল মুণ্ডনের কথা বলছি না। বরং তা ইসলাম মুণ্ডনকারী (ধ্বংসকারী)।’ (তিরমিজি)
হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, আগুন যেমন কাঠ খেয়ে ফেলে তেমনি হিংসা মানুষের সৎকর্ম খেয়ে ফেলে।’ (আবু দাউদ)
ইসলামে হিংসা-বিদ্বেষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মুসলমান কখনোই হিংসুক হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হিংসা থেকে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা ফালাক: ৫)
হিংসা মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। ব্যক্তিগত সাফল্য ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য আমাদের হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করবে না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করবে না এবং পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বুখারি)
ড. মুহাম্মদ ইউছুফ, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়