মো. শামীম রেজা, রাজবাড়ী
সুস্বাদু ফল হিসেবে অনেকেই কুল পছন্দ করেন। রাজবাড়ীতে টক-মিষ্টি সব ধরনের কুল চাষ হয়। বর্তমানে কুলের বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বাড়ছে।
পাংশা উপজেলার কয়েকটি কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার এক-একটি গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে কুল। চাষিরা বাগান থেকে কুল ছিঁড়ে ঝুড়িতে রাখছেন। পরে ওই কুল বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন।
কুলচাষি সাইফুল ইসলাম মাস্টার বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে কুল চাষ করেন। আপেলকুলের বাগান করে প্রথমদিকে অনেক লাভবান হয়েছেন। আবহাওয়া আপেল কুল চাষের উপযোগী নয়। সে জন্য তিনি এখন বল সুন্দরী নামের নতুন জাতের কুল চাষ শুরু করেছেন। এক বছর আগে গাছগুলো রোপণ করেছেন, প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ কেজি করে কুল এসেছে। এখনো বিক্রি করা শুরু করেননি, তবে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা তাঁর।
আরেক কুলচাষি মো. ইয়াসিন বলেন, কুলগাছ লাগানোর সাত মাস পর থেকে গাছে ফুল আসতে শুরু হয়। গত বছর তিনি এক পাখি (৩৫ শতাংশ) জমিতে তাঁরা ২৫০ থেকে ৩০০ গাছ লাগান। ৩০০ গাছে বছরে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। কুল বিক্রি করতে পারেন এক লাখ টাকার। খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়।
তিনি আরও বলেন, এবারও দুই পাখি জমিতে কুলের আবাদ করছেন। তাঁর বাগানে ভালো কুল এসেছে। বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর লাভের আশা করছেন তিনি।
মো. নিয়ামুল ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রায় ১৫ বছরে ধরে কুল চাষে যুক্ত। আবহাওয়া ভালো থাকলে এই বছরও ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করেন। গতবার লাভ হওয়ার কারণে এবার বেশি জমিতে কুল চাষ করেছেন। তিনি এ বছর আপেলকুল ও বল সুন্দরী জাতের কুল চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, বাণিজ্যিকভাবে রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্চফলনশীল জাতের কুল চাষ হয়েছে। বাজারে বল সুন্দরী, আপেলকুল, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ছোট বড় অনেক বাগান হয়েছে। প্রতি বিঘা কুল বাগানে প্রতিবছর ৩০ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয় এবং বিক্রি হয় প্রায় এক লাখ টাকা। প্রতি কেজি কুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় কুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন শিক্ষিত ও বেকার যুবকেরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, এই উপজেলা ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক কৃষির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ধরনের কুল, আম ও পেয়ারা বাগান হচ্ছে। উপজেলায় এ বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের কুল চাষ হয়েছে। কাশ্মীরি কুল, ভারত সুন্দরী কুল, আপেল কুল, বাও কুলসহ আরও কয়েক জাতের কুল চাষ হচ্ছে। এই কুল চাষের মাধ্যমে পাংশা বাণিজ্যিক কৃষির দিকে এগিয়ে যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।