সম্পাদকীয়
সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে যায় ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায়। কিন্তু সেই হাসপাতাল যদি নিজেই মুমূর্ষু অবস্থায় থাকে, তাহলে রোগী সঠিক চিকিৎসা পাবে কীভাবে? নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে চলছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় বুধবার ‘পুরস্কারজয়ী হাসপাতালে গরু-কুকুরের চলাচল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
জানা যায়, এখানে নোংরা পরিবেশে মেঝে ও বারান্দায় গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। বেদনাদায়ক খবর হলো, হাসপাতালের ভেতরে গরু ও কুকুর অবাধে চলাচল করে। রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন না, নিয়মিত ওষুধও পাওয়া যায় না, মেশিন নষ্ট থাকার অজুহাতে অধিকাংশ পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয় এবং পরীক্ষার রিপোর্টেও ভুল পাওয়া যায়।
হাসপাতাল হলো চিকিৎসাসেবা প্রদানের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। তাই মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে হাসপাতালে আদর্শ ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। শুধু হাসপাতাল নয়, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার মান নির্ভর করে সেই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর। যেহেতু হাসপাতাল একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি এবং জীবন রক্ষায় নিয়োজিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, তাই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি।
মমেক হাসপাতালের সার্বিক অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখে হতাশ হওয়ারই কথা। অথচ এই হাসপাতালই আবার সেবার মান নিশ্চিতের জন্য টানা তিন বছর, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ‘হেলথ মিনিস্টারস ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছিল। কিন্তু কী কারণে এখন হাসপাতালটি নিজেই মুমূর্ষু অবস্থায় পতিত হলো, তা বিস্ময়ের ব্যাপার।
সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। সেই হাসপাতালের পরিস্থিতি যদি এতটা খারাপ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাবে কীভাবে? তখন তারা যাবে কোথায়?
কার্ডিওলজি বিভাগের একজন অপারেটর অভিযোগ করে বলেছেন, অকেজো ইকো মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার কথা জানিয়ে ২০২১ সাল থেকে তিন বছরে সাত দফায় হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে সমস্যার সমাধানে হাসপাতালের প্রধান নিজেই আন্তরিক নন।
একটি আদর্শ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার মৌলিক দিক হচ্ছে—ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় উপকরণসহ চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ধরনের আয়োজনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য এটা জরুরি। চিকিৎসাসেবা নির্বিঘ্ন করার জন্য হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টেরও কোনো বিকল্প নেই। আর হাসপাতালের রোগী অনুপাতে বেড-কেবিনের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স
ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মী থাকাও প্রয়োজন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার মান যদি উন্নত করা না যায়, তাহলে সেখানে রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাবে না।
আমরা আশা করব, মমেক হাসপাতালের দৈন্য অবস্থা নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, যাতে রোগীরা এখানে এসে অবহেলার শিকার না হয়।