দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড, বাগেরহাট। ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বকেয়া থাকায় গত সোমবার বিকেলে বাস টার্মিনালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসের শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীরা।
২০১৬ সাল থেকে বাগেরহাট পৌরসভার মালিকানাধীন গুরুত্বপূর্ণ এই বাস টার্মিনালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে ওজোপাডিকো। অন্যদিকে বাগেরহাট বাস মালিক সমিতি বলছে, বিদ্যুৎ বিল বাবদ নিয়মিত টাকা দেওয়া হচ্ছে পৌরসভাকে। বাগেরহাট পৌরসভা বলছে, বিদ্যুৎ-সংযোগ স্থাপনের জন্য চেষ্টা করা হবে।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পক্ষে ‘মেয়র বাগেরহাট পৌরসভা’ নামের হিসাবে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। শুধু বাগেরহাট বাস টার্মিনাল নয়, বাগেরহাট পৌর ভবন, স্ট্রিট লাইটসহ বিভিন্ন ধরনের ১৮টি হিসাবে বাগেরহাট পৌরসভার কাছে আরও প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ওজোপাডিকোর।
পৌরসভার বাইরেও বাগেরহাট জেলা পুলিশের কাছে ২৫ লাখ ১৯ হাজার, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে ৪ লাখ ২১ হাজার, পিসি কলেজে ৩ লাখ ২০ হাজার, বাগেরহাট মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ লাখ ২২ হাজার, রেল রোড জামে মসজিদে ৩ লাখ ও শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে ৪৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে ওজোপাডিকোর।
বাসশ্রমিক সঞ্জিব বিশ্বাস বলেন, ‘বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে এক দিন বাস রাখলে ঢাকার পরিবহনের জন্য ৮০ টাকা এবং লোকাল পরিবহনের জন্য ৫০ টাকা দিতে হয়। এখানকার টয়লেটগুলোও আমাদের টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। তাহলে কেন টাকার জন্য বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। আসলে আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আমাদের টাকার কোনো দাম নেই।’
শ্রমিক মো. মাহতাব হোসেন বলেন, বাগেরহাট স্ট্যান্ড থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের বাস ছাড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আবার সংযোগ স্থাপনের দাবি জানান তাঁরা।
বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আব্দুল বাকি বলেন, তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রতি মাসে পৌরসভার মার্কেটিং অফিসারের কাছে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু করোনাকালে নিয়মিত টাকা দেওয়া হয়নি।
দ্যুৎ না থাকায় বাসশ্রমিক, ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট বাস টার্মিনালে যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ- সংযোগ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বাস টার্মিনাল থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল বাবদ টাকা দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, অন্যান্য হিসাবে যে সাড়ে চার কোটি টাকা রয়েছে ওই টাকার বিপরীতে মাঝেমধ্যে কিছু টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জুন মাসের শেষে রাজস্ব খাতের হিসাব করে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান তিনি।
ওজোপাডিকো, বাগেরহাটের সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকের কাছে ওজোপাডিকোর প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া রাখা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অনেকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং কারও কারও বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি, তাদের বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁরা দ্রুত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের চেষ্টা করছেন।
২০০২ সালের অক্টোবরে বাগেরহাট জেলা শহরের গোবরদিয়া মৌজায় বাস টার্মিনাল স্থাপন করে পৌরসভা। বাগেরহাট পৌরসভা প্রতি বছর বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড ও সংলগ্ন দুটি পাবলিক টয়লেট ইজারা দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করে। এ ছাড়া টার্মিনালসংলগ্ন অর্ধশতাধিক দোকান ভাড়া বাবদও টাকা পায় বাগেরহাট পৌরসভা।