সম্পাদকীয়
কম্পিউটার-ইন্টারনেট-টিভির মতো বিস্ময়কর আবিষ্কার সম্পর্কে আমরা অবহিত। এটা একটা বিপ্লব। তবে এমন নয় যে মানবসভ্যতায় এটাই প্রথম বিপ্লব। মুদ্রণ-বিপ্লব দুই-এক দশকে ঘটেনি, দীর্ঘ সময় লেগেছে, তা আমাদের মন ও চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়েছে।
রীতি নিয়ে হলেও আমরা এগুলো গ্রহণ করে ফেলেছি। কখনো জানতেও চাইনি, মুদ্রণশিল্পের আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনে কী ঘটতে চলেছে। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের ফলে আমাদের কী অর্জন হবে? ঠিক একইভাবে একবারও প্রশ্ন করিনি, ইন্টারনেট কীভাবে আমাদের এবং আমাদের মনকে পরিবর্তন করবে?
এই আবিষ্কার পুরো প্রজন্মকে এমনভাবে তার অসারতার দিকে টেনে নিয়েছে যে সাধারণ বিচারবুদ্ধির মানুষও স্বীকার করবেন একবার ইন্টারনেটের জালে আটকা পড়লে তা থেকে রেহাই পাওয়া খুব সহজ নয়। হয়তো দেখা যাবে পুরোদিনই ব্লগে ব্লগে ঘুরে কেটে যাচ্ছে। ইত্যাদি
খুব সম্প্রতি মাঝারি শিক্ষিতসহ সবাই শিখতে, পড়তে এবং সাহিত্য সংগ্রহে বেশ শ্রদ্ধাশীল। অবশ্যই, আমরা সবাই জানি, একসময় সুখ অনুভূতিকে জিইয়ে রাখতে কেউ কেউ পড়ার ভান করেন আবার কেউ লেখাপড়াকে শ্রদ্ধার চোখে দেখার অভিনয় করেন। কিন্তু এটাও ঠিক, কর্মজীবী পুরুষ ও নারীরা বই পড়ার জন্য হাপিত্যেশ করেন। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের বহু পাঠাগার, বিদ্যাপীঠ ও প্রতিষ্ঠান এর সাক্ষী। পড়া এবং বই ছিল সাধারণ শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
একজন বয়স্ক ব্যক্তি কোনো এক তরুণের সঙ্গে কথা বললেই তার শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। কারণ তরুণটি তুলনামূলক কম জানে এবং যদি শিশু পড়তে না জানে, তাহলে দ্রুত বুঝবেন এ জন্য যে, সে আদৌ পড়েইনি।
আমরা সবাই এই কষ্টকর গল্প জানি। কিন্তু আমরা এর শেষ জানি না। পৃথিবীতে এই পশ্চিমা আমরাই যে মানুষ তা নয়। এই তো কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ে থেকে এক বন্ধু ফোন করে বলল, সেখানকার কোনো এক গ্রামের মানুষ তিন দিন অভুক্ত ছিল। কিন্তু তারপরও তারা বই নিয়ে এবং কীভাবে বই সংগ্রহ সম্ভব, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছে।
ব্রিটিশ সাহিত্যিক ডরিস লেসিং ২০০৭ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।