ধুয়েমুছে সাফ করা হচ্ছে এখানে-ওখানে থাকা ময়লা-আবর্জনা। রাইডগুলোর গায়ে লাগছে নতুন রঙের আঁচড়। কোথাও কোথাও করা হচ্ছে মেরামত। রিসোর্টগুলো কাপড়-চোপড় বদলে করা হয়েছে ঝকঝকে।
এই চিত্র চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সি ওয়ার্ল্ডের। ঈদ সামনে রেখে কদিন ধরেই পার্কটিতে চলছে রং লাগানো আরসংস্কারকাজ। গত শুক্রবার রঙের কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে পার্কটিতে গিয়ে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। পার্কে আলোকসজ্জার কাজ করছিলেন কর্মীরা।
নগরীর পাহাড়তলিতে রেলওয়ের কৃত্রিম জলাশয় ফয়’স লেকে গড়ে তোলা পার্কটি এমনিতেই বহু রাইডে সমৃদ্ধ। এবার ঈদ সামনে রেখে নতুন করে পার্কটিতে শিশুদের জন্য যোগ হয়েছে টয় ট্রেন। এই পার্কটিতে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য অন্তত ১৪টি রাইড আছে। তবে দর্শনার্থীদের পছন্দের শীর্ষে নৌযানে ভ্রমণ। ওয়াটার পার্কের কৃত্রিম ঢেউও কম জনপ্রিয় নয় দর্শনার্থীদের। আবার দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
পার্ক পরিচালনাকারী কোম্পানি কনকর্ডের উপব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে মানুষ বেড়াতে পারেনি। ঈদের দুপর থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে অন্তত ৪০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করছি। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি।’
করোনার থাবায় গত দুই বছর ঈদে অনেকটাই ঘরবন্দী সময় কেটেছে সবার। স্বাস্থ্যবিধি ও দূরত্ববিধি মানতে বন্ধ ছিল বিনোদনকেন্দ্রগুলোও। এবার পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো। সে জন্য ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের মতো পুরোদমে দর্শকদের আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিনোদনকেন্দ্রগুলো। এসব পার্ক পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের আশা গত দুই বছরের ক্ষতি এবার কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠবে। তবে অতিরিক্ত ‘গরম’ নিয়ে তাঁরা কিছুটা ভয়ে আছেন। কারণ গরম বেশি হলে মানুষ কম ভিড়তে পারেন।
ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের পাশ ঘেঁষেই আছে জেলা প্রশাসন পরিচালিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। এটিও নগরীর মানুষের অন্যতম বিনোদন আকর্ষণ। কয়েক বছর ধরে চিড়িয়াখানায় প্রাণী–আর পাখির প্রাচুর্যে সেই ভিড় আরও বেড়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঈদের এক সপ্তাহে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার করে দর্শনার্থী আসবে বলে আশা করছি। গত দুই বছর ঈদে চিড়িয়াখানা বন্ধ ছিল। এবার তাই দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার চিটাগাং শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকার স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক, আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশু পার্কের রাইডগুলোতেও লেগেছে নতুন রং। স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পরিচালনাকারী ওয়েল এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক মো. আলী জনি অবশ্য জনসমাগম নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছেন। কেননা এবারের পয়লা বৈশাখে করোনার বিধিনিষেধ না থাকলেও প্রত্যাশিত দর্শনার্থী আসেনি।
ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। এই সৈকতে ফি ছাড়াই প্রবেশ করা যায়। এখন প্রতিদিনই হাজারো মানুষের ভিড় জমে সেখানে। তবে ঈদের পর থেকে সেই সংখ্যা দিনে লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই আশায় দিন কাটছে সৈকতের আসবাব-তৈজসপত্র ও খেলনার ব্যবসায়ীরা।
আসবাব–তৈজসপত্র বিক্রির বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘করোনা দুই বছর করোনার কারণে ঈদের সময় কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারেনি সৈকতে। এবার পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এবার তাই আমরা আশাবাদী।’
বিনোদন কেন্দ্র ও উন্মুক্ত স্থানে বেড়ানো নিরাপদ করতে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসনও। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তৌহিদুল ইসলাম, ‘দুই বছর পর এবারের ঈদে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। দর্শনার্থীদের চাপ তাই নিশ্চয় অনেক বেশি থাকবে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও নির্বিঘ্ন বিনোদনের ব্যবস্থা করতে সব বিনোদন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা থাকবেন।’