হোম > ছাপা সংস্করণ

বিদেশি সাংবাদিক আটকে রেখেই গণহত্যা শুরু

এ আর চন্দন, ঢাকা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালি জনসাধারণের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই হিংস্র পাকিস্তানি সেনারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আটকে রেখেছিল সব বিদেশি সাংবাদিককে। পরের কয়েক দিন ঢাকায় তো কোনো সংবাদপত্রই প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি সংবাদপত্রের অফিস।  

এত সব কড়াকড়ির মধ্যেও ঢাকায় থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে মনস্থির করেছিলেন দুই বিদেশি সাংবাদিক। তাঁরা হলেন– লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফের রিপোর্টার সাইমন ড্রিং এবং বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ফটোসাংবাদিক মাইকেল লরেন্ট। সেনাবাহিনীর তল্লাশি এড়িয়ে তাঁরা হোটেলের এয়ারকন্ডিশন সিস্টেমের প্যাসেজ ধরে ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে বাঙালি কর্মচারীরা রান্নাঘরে তাঁদের লুকিয়ে রাখেন। সেই রাতে তাঁরা দুজন হোটেলের ছাদে উঠে যতটা সম্ভব চারদিকের অবস্থা দেখে নেন। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়া হলে শহর ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং ছবি তোলেন। শেষ পর্যন্ত ২৯ মার্চ ব্যাংকক পৌঁছে সচিত্র প্রতিবেদন লন্ডনে পাঠান। ৩০ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত সাইমন ড্রিংয়ের সেই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রথম বিশদভাবে জানতে পারে ঢাকায় গণহত্যার বিবরণ। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘আল্লাহ ও অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার নামে ঢাকা আজ ধ্বংস ও ভীতির নগরী। পাকিস্তানি সেনাদের ঠান্ডা মাথায় টানা ২৪ ঘণ্টা গোলাবর্ষণের পর ওই নগরীর ৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে বিস্তীর্ণ লাকা।...সামান্যতম অজুহাতে লোকজনকে গুলি করে মারা হচ্ছে।...ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে তাদের বিছানায়, বাজারে কসাইদের মেরে ফেলা হয়েছে তাদের দোকানের পেছনে, নারী ও শিশুরা জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে, একসঙ্গে জড়ো করে মারা হয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর, বাজার, দোকানপাট।’ রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও পুরান ঢাকায় হত্যাযজ্ঞেরও বিবরণ ছিল তাতে। 

সাইমন ড্রিং পরবর্তী সময়ে একাধিক সাক্ষাৎকার ও লেখায় সেই কালরাতের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘২৫ মার্চ বিকেলে আমরা জানলাম, আলোচনার জন্য ঢাকায় আসা ইয়াহিয়া খান কোনো সমঝোতা ছাড়াই ঢাকা ত্যাগ করেছেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভীতিকর হতে লাগল। শহরজুড়েই নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়ল। আমরা বুঝতে পারলাম, এখানে ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, রাত ১০টার কিছু আগে আর্মি শহরের রাস্তা দিয়ে চলাচল শুরু করে। রাত ১১টার দিকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তখন যারা বিভিন্ন বেসামরিক গাড়ি উল্টিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে বা কংক্রিটের পাইপ ফেলে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তারাই সেনাবাহিনীর প্রথম শিকারে পরিণত হয়। মধ্যরাতের কিছুক্ষণ পরই এম-২৪ ট্যাংক নিয়ে একদল সৈন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যায়। সৈন্যরা ব্রিটিশ-কাউন্সিল-লাইব্রেরি দখল করে। সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে গোলাবর্ষণের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। মর্টার ও কামানের গোলায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রকম্পিত হতে থাকে।  

২৭ মার্চ সকালে যে ৩৫ জন সাংবাদিককে অস্ত্রের মুখে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে উঠিয়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়ে উড়োজাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের সিডনি শনবার্গ এবং ভয়েস অব আমেরিকার ডোনাল্ড উইভার। আকাশপথে ভারতের ওপর দিয়ে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই বিমানটিকে যেতে হয় কলম্বোতে যাত্রাবিরতি করে। ডন উইভার কলম্বোতে নেমেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে টেলিফোন-বার্তায় ঢাকায় হত্যাযজ্ঞের তথ্য পরিবেশন করেন। বহির্বিশ্বের কাছে সেটিই ছিল বাংলাদেশে পাকিস্তানি তাণ্ডবের প্রথম প্রকাশিত তথ্য। ২৮ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমস সিডনি শনবার্গের দুটি বড় প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘বিদ্রোহ দমাতে সৈন্যরা কামান দাগাচ্ছে’ এবং ‘পূর্ব পাকিস্তানে কামানের বিরুদ্ধে লাঠি ও বল্লম’ শিরোনামে। 

কলকাতা থেকে প্রকাশিত যুগান্তর ২৭ মার্চ প্রথম পাতায় প্রধান প্রতিবেদনসহ ছয়টি প্রতিবেদন ছাপে বাংলাদেশ নিয়ে। একটি শিরোনাম ছিল ‘পাক মিলিটারীর তাণ্ডবে বাঙালীর রক্ত ঝরছে’। প্রতিটি খবরই ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। 

সেই কালরাতেই সামরিক বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে তা প্রকাশ করেনি। 

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন