ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
ডলার-সংকটে অর্থনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সংকট নিরসনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ঘনীভূত হচ্ছে, যার চাপ পড়ছে রিজার্ভের ওপর। ডলারের ধাক্কায় রিজার্ভ তলানিতে নেমে এসেছে। এখন রিজার্ভ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার কার্যকর পদক্ষেপ।
আইএমএফ ডিসেম্বরের জন্য রিজার্ভের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। এ লক্ষ্য আগামী মার্চের জন্য ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন এবং জুনের জন্য ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এটা অর্জন করতে হবে।
দেশের রপ্তানি আয়ে খরা চলছে। রেমিট্যান্সেও খুব একটা অগ্রগতি নেই। ডলার আয়ের প্রধান উৎস সংকীর্ণ হওয়ায় টান পড়েছে রিজার্ভে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর উচিত প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করে রেমিট্যান্স সমৃদ্ধ করা। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে উল্টো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহজে ডলার নিচ্ছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে রিজার্ভে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছর সস্তা দরে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করে সেই দরে বাজারে ডলার পাওয়া যায় না। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেট ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে খোলাবাজারে ১২৯ টাকার রেকর্ড রয়েছে। রিজার্ভ মারাত্মক কমার পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির প্রবণতা কমছে না। আর ডলারের সংকট জন্য দায়ী হুন্ডি বন্ধে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। তবে অল্প সময়ে হবে না। অন্তত কয়েক মাস লাগবে। রিজার্ভ বাড়াতে বিদেশ থেকে স্বল্পসুদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া যেতে পারে। কমাতে হবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ।
ডলারের চড়া দামে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন না। বিনিয়োগ করতে ডলারের প্রয়োজন। তা ব্যাংকে মিলছে না। প্রায় দেড় বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে অর্থনৈতিক সংকট বাড়বে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক