মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ৮টি ভবনের কাজ ৯৮ থেকে ৯৯ ভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু আরডিপিপি অনুমোদন না হওয়ায় পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এসব কারণে ভবনগুলো হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিয়েই চলছে পাঠদান কার্যক্রম।
পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল, ডাক্তার ডরমিটরি, স্টাফ নার্সেস ডরমিটরি, ইমার্জেন্সি স্টাফ ডরমিটরি, কম্বাইন্ড কোয়ার্টার কলেজ ও হাসপাতালের জন্য, পানি সরবরাহ লাইন, বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ফিনিশিং কাজ চলমান। ইতিমধ্যে ৮টি ভবনের কাজ ৯৮ থেকে ৯৯ ভাগ শেষ হয়েছে। আরডিপিপি অনুমোদন না হওয়ায় পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি, ফলে নির্মাণ করা ভবন ব্যবহার উপযোগী হচ্ছে না। এদিকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে অধিকাংশ ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের অভাবে ভবনগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
এ ছাড়া মসজিদ, জিমনেসিয়াম ভবন, প্রিন্সিপাল এবং পরিচালকের বাসভবন, প্লে-গ্রাউন্ড, টিচিং মর্গ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, পাম্প হাউস এবং জেনারেটর, গার্ডেন ফেন্সিং, গ্যারেজ ও পাবলিক টয়লেট, গারবাজ, ল্যান্ড স্কাপিং, বহিঃবিদ্যুৎ, সাইকেল স্ট্যান্ড, কালভার্ট, ড্রেনেজ ইত্যাদি, ওয়াস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান, স্টোর, গোডাউন, ওয়াটার বোর্ড, পুকুর খনন আরডিপিপি অনুমোদন না হওয়ায় দরপত্র আহ্বান করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের নির্মাণকাজের বেশ কিছু অংশ ডিপিপি অনুযায়ী ইন্ডিয়া লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ইন্ডিয়া ক্রেডিটের পরিবর্তে জিওবির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ‘আমাদের কলেজের ভবন নির্মাণকাজ খুব ধীরগতিতে চলছে। আমাদের আবাসন সমস্যাটা অনেক বেশি। ছাত্রাবাসের সম্পূর্ণ কাজ প্রায় হয়ে গেছে, কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা হলে উঠতে পারছি না। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন হোস্টেলে স্থানান্তর করা হোক।’
মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা আক্তার বলেন, ‘আমি বর্তমানে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। সেই প্রথম বর্ষ থেকে গণরুমে বসবাস করছি। অন্য মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে সিঙ্গেল রুম পায়, কিন্তু বাধ্য হয়ে এখনো গণরুমে বসবাস করছি। বৃষ্টির দিনে আমাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত পড়াশোনার গতি বৃদ্ধি ও আবাসস্থলের সুযোগ নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও আবাসস্থলের কারণে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভবন নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলে পূর্ণ একাডেমিক পরিবেশে পাঠদান ও মানসম্মত থাকার ব্যবস্থা খুবই জরুরি।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুত ভবন হস্তান্তর ও দরপত্র আহ্বান করে নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে।’