প্রথমবারের মতো একক অভিনয় নিয়ে টানা চার দিন আপনি মঞ্চে। বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছেন?
একটু প্রেশার তো আছেই। যেহেতু মঞ্চে একক অভিনয় করিনি আগে। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের এ প্রযোজনায় ৭টি চরিত্র করতে হয় একই সঙ্গে। সাতটি চরিত্র সাত রকম করে করতে পারার একটি বিষয় আছে। সব মিলিয়ে ডেফিনেটলি এক্সাইটেড। আবার একটু নার্ভাসও। সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে আমার মধ্যে।
‘পারো’ নাটকের গল্প কী নিয়ে?
নারীর ভেতর ও বাইরের যে দ্বন্দ্ব, সেটাই পারো নাটকে বেশি করে এসেছে। মানুষের তো আসলে দুটি সত্তা থাকে—একটা ভেতরের, আরেকটা বাইরের। ভেতরের সত্তা তাকে সমাজের নানা নিয়মকানুনের মধ্যে বেঁধে রাখে। কিন্তু বাইরের যে ব্যক্তিমানুষটা, তার হয়তো অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে। সে সমাজের বাধাগুলো ভাঙতে চায়। প্রতিবাদ করতে চায়। কিন্তু তার ভেতরই তাকে প্রতিবাদ করতে দেয় না। এ ধরনের দ্বন্দ্ব সবার মধ্যে চলতে থাকে। পুরুষশাসিত সমাজে একটা নারী ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠতে উঠতে শারীরিক ও মানসিক—নানাভাবে নির্যাতিত হয়। কিন্তু সে সব সময় তার প্রতিবাদটি করতে পারে না। নাটকটি দেখতে গিয়ে প্রত্যেক নারী কোথাও না কোথাও নিজেকে খুঁজে পাবেন।
মঞ্চে দুই যুগ ধরে অভিনয় করছেন আপনি। এই দীর্ঘ সময়ে অভিনেত্রী হিসেবে তো অবশ্যই সমৃদ্ধ হয়েছেন। ব্যক্তি হিসেবে কতটা সমৃদ্ধ হলেন?
অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমাকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করেছে নাট্যতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা। অনেক বিষয় জেনেছি, টেকনিক্যাল সাইড, মেথড সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু দলে এসে যেটা হয়েছে, মানুষের সঙ্গে ব্যবহার, ডিসিপ্লিন, পারস্পরিক সম্মানবোধ, কাকে কী বলা যাবে বা যাবে না—নানা ধরনের সামাজিকতার বিষয়গুলো আমাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। থিয়েটার তো একটা পরিবারের মতো। এই যে এত মানুষের সঙ্গে এত বছর ধরে জার্নি করা, সুখ-দুঃখে একসঙ্গে চলা; এটা তো নিশ্চয়ই অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
মঞ্চে অনেক ধরনের কাজ হচ্ছে। দর্শকও বেড়েছে। কিন্তু নতুন দর্শক কি বেড়েছে? যাঁরা সব সময় মঞ্চনাটক দেখেন, তাঁরাই কিন্তু ঘুরেফিরে আসছেন। নতুন দর্শক তৈরি হচ্ছে কি না, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। নতুন দর্শক তৈরি করা বা নতুন দর্শক যুক্ত হওয়া; সেই জায়গাটায় আমরা টাচ করতে পেরেছি কি না আমি জানি না। এখন ডিজিটাল যুগ, সবার হাতে মোবাইল, বিনোদনের অনেক পথ এখন দর্শকের সামনে খোলা। কিন্তু থিয়েটার দেখে বিনোদিত হওয়ার মতো মানুষের সংখ্যা আসলে কতটা? একজন দর্শক থিয়েটার দেখতে কেন যাবে বা ওই সময়টা সে কেন ব্যয় করবে? থিয়েটারচর্চার ধরন বা প্রেজেন্টেশনটা কি আগের মতোই থাকবে? এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। তরুণদের নিয়েও ভাবতে হবে। তারা কী ধরনের কাজ দেখতে পছন্দ করে বা আমাদের কাজটিই এমনভাবে প্রেজেন্ট করা যায় কি না, যেটা দেখার জন্য তারা আগ্রহী হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার দরকার আছে।
আমার কাছে মনে হয়, আর্কাইভ থাকা উচিত। চ্যানেল আইয়ের আইস্ক্রিন মঞ্চনাটকের প্রচার শুরু করেছে। যদিও মঞ্চনাটক টেলিভিশনের মতো শুটিং করে দেখানো হলে আসল মঞ্চনাটকের স্বাদ পাওয়া যায় না। তবু নাটকের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জন্য এই আর্কাইভের দরকার আছে। আমি হয়তো আলী যাকেরের প্রোডাকশন দেখতে চাইছি বা সেই সময়ে আসাদুজ্জামান নূর ভাই কেমন অভিনয় করতেন; সেই প্রোডাকশনটা আমি দেখতে চাইছি। কিন্তু সেটার কোনো সুযোগ নেই। এটার জন্য আমার মনে হয়, প্রতিটা দলেরই একটা নিজস্ব আর্কাইভ থাকা উচিত। এটা খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু এটার ক্ষেত্রে কেন গড়িমসি করা হয় আমি জানি না।