পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর পাংশায় পরিকল্পিতভাবে একটি ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সপরিবারে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরের সব দরজা ও বাড়ির প্রধান ফটক বাহির থেকে আটকে দিয়ে গভীর রাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় জানালা ভেঙে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের চার সদস্য।
গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে পাংশা পৌর শহরের মৈশালা গ্রামে তাঁতীপাড়া এলাকার (ফায়ার সার্ভিসের পেছনে) লিটন কুমার কুণ্ডুর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সোমবার রাতে লিটন কুমার কুণ্ডুর বাড়ির খড়ির ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে পুরো বসতঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার বিষয়টি জানতে পেরে পাংশা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বসতঘরের পাঁচটি কক্ষের সব আসবাবপত্র ও একটি খড়ির ঘর পুড়ে যায়। এ ছাড়া একটি মোটরসাইকেলসহ ঘরে থাকা সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে।
এতে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে বলে জানায় পরিবারটি। খবর পেয়ে পাংশা পৌর মেয়র ও পাংশা মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ভুক্তভোগী লিটন কুমার কুণ্ডু বলেন, প্রতিদিনের মতো ভাই টিটু কুমার কুণ্ডু, ছেলে প্রত্যয় কুমার কুণ্ডু ও মা মুক্তি রানী কুণ্ডুকে নিয়ে রাত ১১টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে হঠাৎ ঘরে আগুন লাগার বিষয়টি টের পেয়ে ঘরের মধ্যে থাকা বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন। পরে ঘর থেকে বের হতে গেলে ঘরের দরজা খুলতে পারেননি।
এ সময় চিৎকার করতে থাকেন এবং ঘরের জানালা ভেঙে ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন বসতঘরের পাঁচটি দরজা ও বাড়ির প্রধান ফটক বাইরে থেকে আটকানো। পরে ঘরের দরজা খুলে ভাই, ছেলে ও মাকে নিয়ে খড়ির ঘরে লাগা আগুন নেভাতে যান।
তিনি আরও বলেন, কে বা কারা হয়তো কোনো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তাঁদের সবাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে ঘরে আগুন দিয়েছে। তবে এলাকার কারও সঙ্গে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের মতবিরোধ নেই বলে জানান তিনি।
লিটন কুমার কুণ্ডুর ভাই টিটু কুমার কুণ্ডু বলেন, ভাইয়ের চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে দরজা আটকানো। পরে ভাই এসে দরজা খুলে দিলে ঘর থেকে বের হয়ে খড়ির ঘরের আগুন নেভাতে যান। মুহূর্তেই সম্পূর্ণ বসতঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের চারটি প্রাণ ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি ধারণা করছেন, এটা শুধু অগ্নিকাণ্ডই নয়, তাঁদের এখান থেকে উচ্ছেদ ও হত্যার উদ্দেশ্যেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
পাংশা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. রয়েল আহম্মেদ বলেন, বাড়িটি ফায়ার স্টেশনের নিকটেই। তাঁরা আগুন দেখে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
কোনো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো রাসায়নিক পদার্থের আলামত পাওয়া যায়নি।
পাংশা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দেবে বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।