ফরিদ খান মিন্টু, শরণখোলা (বাগেরহাট)
জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়া জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। মৎস্য দপ্তরের তদারকি না থাকায় প্রতিবছর দুর্যোগে জেলেরা সাগরে প্রাণ হারান। গত তিন দশকে সাগরে ডুবে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমুদ্রগামী কয়েকজন জেলে বলেন, জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে মহাজনদের ট্রলারে সাগরে মাছ ধরতে যান। ট্রলারে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবনরক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া নেওয়া হয় না। ফলে সাগরে ট্রলার ডুবে গেলে তাঁদের বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন থাকে না।
গত তিন দশকে সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দুবলারচরে প্রায় ৫০০, ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাগরে আকস্মিক ঝড়ে ৩ শতাধিক, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে সুন্দরবনে প্রায় সাড়ে ৩০০ জেলে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ভুক্তভোগী জেলেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ে অনেক ট্রলার ডুবে জেলেরা মারা যান। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ে প্রায় ২৫টি ট্রলার ডুবে ১২ জেলে নিখোঁজ হন। এর মধ্যে সাত জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারে জেলেদের জীবনরক্ষায় নামকাওয়াস্তে ২-১টি লাইফবয়া রাখলেও ট্রলারমালিকদের উদাসীনতায় লাইফ জ্যাকেট আদৌ রাখা হয় না। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুবলারচরের কয়েক হাজার শুঁটকি জেলে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই সাগরে মাছ ধরেন। আগামী বছর থেকে লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া ছাড়া দুবলারচরের কোনো জেলে সাগরে যেতে পারবেন না বলে নিশ্চয়তা দেন তিনি।
জেলেপল্লি দুবলা ফরেস্ট টহলফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় বলেন, দুবলাসহ সমুদ্রগামী কোনো মাছ ধরার ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া দেখা যায় না। ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট রাখা হলে জেলেদের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারে জেলেদের জীবন রক্ষায় লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া রাখা বাধ্যতামূলক এবং এটা তদারকির দায়িত্ব সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের। কোস্টগার্ডও ট্রলারের দেখভাল করতে পারে। জেলায় সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের অফিস না থাকায় একটি দপ্তর করার জন্য শরণখোলায় জায়গা খোঁজা হচ্ছে। এক বছরের মধ্যে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের অফিস চালু করা হবে, তখন ট্রলারগুলোতে নজরদারি করা যাবে বলে আশা করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।