শামিম রেজা, রাজবাড়ী
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী পাখি হিসেবে পরিচিত বাবুই। আগে বেশির ভাগ তাল বা খেজুর গাছে দেখা যেত বাবুই পাখির বাসা। নিপুণভাবে বাসা তৈরি করতে তাদের জুড়ি নেই। কিন্তু নির্বিচারে পাখি শিকার আর বৃক্ষনিধনের ফলে ধীরে ধীরে পাখি হারাচ্ছে তাদের নিবাস। প্রায় বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি ও তার বাসা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রামে কয়েকটি তালগাছে দেখা মিলল বাবুই পাখির। বাড়িগ্রাম-বানিবহ আঞ্চলিক সড়কটির পাশে কয়েকটি তালগাছে শৈল্পিক দক্ষতায় খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচি পাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে তালগাছের ঝুলন্ত পাতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে বাসা বুনছে এই শিল্পী পাখি। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত করে রেখেছে এলাকাটি।
প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসা বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখেতে এই গ্রামে ভিড় করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। গাছগুলোর নিচে এসে কেউ নিজেদের, কেউবা বাবুই পাখি ও তার বাসার ছবি তুলছেন। স্থানীয় ফজলুল হক মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এই গাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। অনেক দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। অনেকেই ছবি তুলে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, এখানে বাবুই পাখি থাকাতে ফসলে পোকামাকড় আক্রম করতে পারছে না। তাঁরা এলাকাবাসী সব সময় পাখিদের দেখাশোনা করেন; কেউ যেন পাখি শিকার না করে বা পাখির বাসা নষ্ট না করে।
স্থানীয় আব্দুস ছামাদ বলেন, তালগাছগুলো তিনি ১৫ বছর আগে লাগিয়েছিলেন। সেই গাছে কয়েক বছর ধরে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। পাখির যেন কোনো ক্ষতি না হয় এবং পাখি যেন তাঁর গাছ থেকে চলে না যায়, সে জন্য তিনি কয়েক বছর ধরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা থেকে বিরত রয়েছেন। পাখিরা যেন নিরাপদে তাঁর রোপণ করা গাছে থাকে সে জন্য তিনি সব সময় নজরদারি করেন।
আইনজীবী অভিজিৎ সোম বলেন, এখন সচরাচর বাবুই পাখি দেখা যায় না। কয়েকটি গাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে শুনে দেখার জন্য শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বাড়িগ্রামে এসেছেন। এখানে এসে খুবই ভালো লেগেছে।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান বলেন, বৃক্ষনিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাবুই পাখি বিলুপ্ত হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। বাবুই পাখি সাধারণত তাল ও খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাল ও খেজুর গাছ কেটে ফেলছে মানুষ। আরেকটি কারণ হচ্ছে, ফসলে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারছে না। এসব বিষয় মাথায় রেখে সবাইকে নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা উচিত। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন পাখিটি সম্পর্কে জানতে পারে।