তোয়াহা আজিজ
জাহিলি যুগের যেসব কবি-সাহিত্যিক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের একজন ছিলেন সেকালের শক্তিমান নারী কবি খানসা। জাহিলি যুগেই তিনি আরবি সাহিত্যিকদের কাছ থেকে তাঁর কাব্যপ্রতিভার স্বীকৃতি লাভ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর মহানবী (সা.) তাঁর কবিতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন এবং পরবর্তী খলিফারাও তাঁকে মূল্যায়ন করেন।
আরবি খানসা শব্দের অর্থ হরিণী। চঞ্চল ও অনিন্দ্য সুন্দরী হওয়ায় তাঁকে এই নামে ডাকা হতো। তাঁর আসল নাম তুমাদির ইবনে আমর। আরবের নজদের কায়েস গোত্রে ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের আগে খানসার কয়েকবার বিয়ে হয়।
৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে কবি খানসা নিজ গোত্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মদিনায় আসেন। সেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ ও ইসলাম গ্রহণ করেন। এই সাক্ষাতে তিনি মহানবী (সা.)-কে নিজের কবিতা পাঠ করে শোনান। তিনি কবিতা শুনে মুগ্ধ ও বিস্ময় হন এবং প্রশংসা করেন। (আল-ইসাবা: ৪/৫৫০) ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) খানসার কবিতা পছন্দ করতেন, তাঁর কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং তাঁকে ইঙ্গিত করে বলতেন—তোমাকে অভিবাদন হে খানসা।’ (আল-ইসাবা: ৮/৩৪)
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খানসা (রা.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে এসেছিলেন এবং তাঁর জীবনের দুঃখের গল্প শুনিয়েছিলেন। (আল-ইসাবা: ৪/২৯৬)
খানসা (রা.) ১৬ হিজরিতে সংঘটিত কাদেসিয়ার যুদ্ধে নিজের চার ছেলেকে অংশ নিতে উৎসাহ দেন এবং ঘটনাচক্রে যুদ্ধে চারজনই শহীদ হন। তাঁদের শাহাদাতের খবর শুনে তিনি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। যুদ্ধে উৎসাহ দিয়ে ছেলেদের উদ্দেশে দেওয়া তাঁর সেই বক্তৃতা এবং শাহাদাতের খবর শুনে তাঁর আওড়ানো কবিতার কথা ইসলামের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা আছে। (উসুদুল গাবা: ৫/৪৪২)
আরবি কবিতার প্রায় সব শাখায় খানসার বিচরণ ছিল। সেকালের আরব সভ্যতা ও মরু অঞ্চলের প্রায় সব উপাদান তাঁর কবিতায় স্থান পেয়েছে। তবে শোককবিতা রচনায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নাবিগা জুবয়ানি তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ‘খানসা জিন ও মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি।’ (আশ-শিরু ওয়াশ-শুআরা)
আব্বাসীয় যুগের কবি বাশশার ইবনে বুরদ বলেন, ‘নারী কবিদের কবিতার গভীরে গেলে আমি কোনো না কোনো খুঁত পাই।’ এ কথা শুনে লোকজন বাশশারকে প্রশ্ন করল, ‘খানসার কবিতারও কি একই অবস্থা?’ জবাবে বললেন, ‘তিনি তো পুরুষ কবিদেরও ঊর্ধ্বে।’ (তাবাকাতুশ শুআরা: ২৭১)
আল্লামা ইবনুল আসির বলেন, ‘আরবি কবিতার পণ্ডিতেরা এক সুরে বলেছেন, খানসার আগে-পরে তাঁর চেয়ে বড় কোনো নারী কবির জন্ম হয়নি।’ (উসুদুল গাবা: ৫/৪৪১)