হোম > ছাপা সংস্করণ

গানের স্রষ্টার প্রয়াণ

বিনোদন ডেস্ক

গতকাল সকালটা ছিল বিষণ্নতায় মাখা। চলে গেলেন অসংখ্য বাংলা গানের স্রষ্টা কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে এল সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। অনেকেই ছুটে গেলেন হাসপাতালে, কেউ কেউ বারিধারার বাড়িতে। অনেকেই আজ যাবেন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে। কিংবদন্তি এই গীতিকারের প্রয়াণে শিল্পীরা জানাচ্ছেন শ্রদ্ধাঞ্জলি, হয়েছেন স্মৃতিকাতর।

তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না
মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান,
গীতিকার
গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে বাংলাভাষীরা চেনেন গীতিকার হিসেবে। অথচ তিনি চিকিৎসক হতে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এমবিবিএস পড়া বাদ দিলেন গীতিকার হওয়ার আশায়। তাঁর সে সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা সবার কাছে এখন সহজেই অনুমেয়। ১৯৬৪ সালে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। তখন ঢাকা বেতারই ছিল একমাত্র প্রচারমাধ্যম, যারা গীতিকবির যোগ্যতা নির্ধারণ করত। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গীতিকবিতায় তারা মুগ্ধ হলো। তাঁকে গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিল। গাজী মাজহারুল আনোয়ার যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন, সেখানে কেউ কখনো পৌঁছাতে পারবে কি না সন্দেহ আছে।

আমাকে দিয়ে সিনেমায় অভিনয় করিয়েছিলেন
সাবিনা ইয়াসমীন,
সংগীতশিল্পী
বহু বছরের অসংখ্য স্মৃতি তাঁর সঙ্গে আমার। তাঁর লেখা কত গান গেয়েছি! তিনি জোর করে তাঁর একটা সিনেমায় আমাকে অভিনয় করিয়েছেন। সিনেমায় আমার চরিত্রটিও ছিল একজন শিল্পীর। এটা আমার জীবনের বিশেষ এক স্মৃতি। তাঁর লেখা এত দারুণ সব গান, অসংখ্য গান আমার পছন্দের। প্রায়ই গুনগুন করে গেয়ে উঠি ‘যদি আমাকে জানতে সাধ হয়’। হারজিত সিনেমার জন্য গাওয়া হয়েছিল গানটা। অসম্ভব সুন্দর একটা গান। যেমন লেখা, তেমন সুর। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২১ হাজারের বেশি গান লিখেছেন। একটা সময় টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, বেতারসহ সব মাধ্যমের সংগীত পরিচালকেরা তাঁর গানই খুঁজতেন। তাই প্রতিদিনই একাধিক গান লিখতে হতো তাঁকে। এত গান লিখেছেন যে সব গান নিজের সংগ্রহেও রাখতে পারেননি।

গান পাঠিয়ে বলেছিলেন এর চেয়ে মূল্যবান সম্পদ আমার কাছে নেই
মনির খান,
সংগীতশিল্পী
এমন কোনো দিন নেই তাঁর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হতো না। একদিন ফোন না দিলেই তিনি ফোন করে আমার খোঁজ নিতেন। জানতে চাইতেন আমার শরীর ভালো আছে কি না। আমি তাঁর সন্তানতুল্য ছিলাম। তিনি সব সময় বলতেন, আমার দুটি ছেলে—একটা উপল আরেকজন মনির। আমার শেষ জন্মদিন গেল ১ আগস্ট। সেদিন শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাকে একটা গান পাঠিয়েছিলেন। আর বলেছেন, ‘বাবা, এর চেয়ে মূল্যবান কোনো সম্পদ আমার কাছে নেই। তোমাকে কী দেব, একটি গান পাঠালাম। যত্ন করে রেখো। আর আমার জন্য দোয়া কোরো। মাঝেমধ্যে শরীরটা খারাপ হয়।’ আমি বলেছি, ‘কাকা, সাবধানে থাকবেন। ওষুধ ঠিকমতো খাবেন।’ তাঁর মতো মেধাবী মানুষের প্রয়াণে অমূল্য সম্পদ হারালাম আমরা। তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। 

ওনার সঙ্গে আর কাজ করা হলো না
শাকিব খান,
চিত্রনায়ক
করোনার মধ্যে কয়েক শ সিনেমা দেখেছি। যে গানগুলোই ভালো লাগছিল নোট করে রাখছিলাম। পরে সার্চ দিয়ে দেখি বেশির ভাগই গাজী আংকেলের গান। গত বছর ওনার বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও দেখা হয়েছিল। আমি আংকেলের অসংখ্য গানে লিপসিং করেছি। উনি সুন্দর সুন্দর সিনেমাও বানিয়েছেন। আফসোস ছিল উনার সিনেমায় অভিনয় করতে না পারার। একদিন আংকেল ‘সমাধি’ সিনেমার জন্য আমার শিডিউল চাইলেন, সিনেমাটি তিনিই পরিচালনা ও প্রযোজনা করবেন। গল্প শোনাতে চাইলেন। আমি তার আগেই শিডিউল দিয়ে দিলাম। বললাম, ‘আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। আপনাকে ধন্যবাদ।’ গত বছরও তাঁকে বলেছি, ‘আংকেল, আপনি যদি আবার সিনেমা বানাতে চান। যেদিন যেভাবে চাইবেন আমি সিনেমাটি করব।’ কিন্তু ওনার সঙ্গে আর কাজ করা হলো না। 

জানা অজানা

  • দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও সিনেমার গান মিলিয়ে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গানের সংখ্যা ২১ হাজারের বেশি।
  • কঠিন শব্দ বসিয়ে গান লেখার পক্ষে ছিলেন না কখনো। তিনি মনে করতেন, গান হতে হবে সর্বজনীন। যারা শুনবে, তারা সহজেই যেন বুঝতে পারে।
  • কুমিল্লা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে গান লেখার নেশায় মেডিকেলে পড়াশোনা ছেড়ে দেন।
  • মেডিকেলের পড়াশোনা ছাড়তে চাওয়ার পর তাঁর বাবা খুব হতাশ হয়ে একটি চিঠি লিখে বলেছিলেন, ‘ইউ আর মাই লস্ট গেম।’ বাবার মৃত্যুর আগেই তিনি একুশে পদক পান। তখন বাবা তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমি তোকে চিঠি লিখে যে কথাটি বলেছিলাম, সেটা সঠিক নয়। যার যা পথ, সেটাই সত্যি হয়।’
  • রেডিওতে প্রচারিত তাঁর লেখা অনেক গানের রেকর্ড হারিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের সময়। নিজের অনেক গানের খাতাও খোয়া গিয়েছিল।
  • স্বাধীনতার পর গীতিকার হিসেবে প্রথম রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পান তিনি।
  • গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের থিম সংয়ে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতারের অধিবেশন শুরু হতো এ গানের মাধ্যমে, শেষও হতো এটা বাজিয়ে।

জনপ্রিয় কিছু গান

  • জয় বাংলা বাংলার জয়
  • একবার যেতে দে না
  • একতারা তুই দেশের কথা
  • গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে
  • হই হই হই রঙ্গিলা
  •  চিঠি দিয়ো প্রতিদিন
  • আমায় তুমি মনে রাখো না রাখো
  • ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই
  • চোখ যে মনের কথা বলে
  • সে যে কেন এল না
  • আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল
  • আছেন আমার মোক্তার
  • আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে
  • বন্ধু তিন দিন তোর
  • শুধু গান গেয়ে পরিচয়
  • ইশারায় শিস দিয়ে
  • সবাই বলে বয়স বাড়ে আমি বলি কমে
  • ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা
  • সবাই তো ভালোবাসা চায়
  • এই মন তোমাকে দিলাম
  • তোমারই পরশে জীবন আমার
  • ডোরা কাটা দাগ দেখে
  • একা একা কেন ভালো লাগে না
  • ঢাকা শহর আইসা আমার

একনজরে

জন্ম: ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ (কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার তালের ছেও গ্রামে)। পিতা মোজাম্মেল হোসেন, মা খাদেজা বেগম।
পরিবার: জোহরা গাজী (স্ত্রী), দিঠি আনোয়ার (মেয়ে), সরফরাজ উপল আনোয়ার (ছেলে)
পড়াশোনা: উচ্চমাধ্যমিক (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ), স্নাতক (জগন্নাথ কলেজ)
প্রথম গান: ১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে। প্রথম গানের শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন। 
সিনেমায় প্রথম গান: ১৯৬৭ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমায় ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’।
প্রযোজনা ও পরিচালনা: প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা ৩১টি। পরিচালনা করেছেন ২১টি সিনেমা। তাঁর পরিচালিত প্রথম মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘নান্টু ঘটক’ (১৯৮২)
পদক ও পুরস্কার: একুশে পদক (২০০২), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২১), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ছয়বার), বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, নিগার অ্যাওয়ার্ড (পাকিস্তান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সংগীতবিষয়ক সম্মাননা, জাপান বাংলাদেশ সম্মাননা, সিডাব পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার ইত্যাদি
অনন্য অর্জন: বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তিনটি বাংলা গানের গীতিকার (জয় বাংলা বাংলার জয়, একতারা তুই দেশের কথা, একবার যেতে দে না)

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন