নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
একটি অসাধু সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে বাধাগ্রস্ত করছে—এমন অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম সম্মিলিত ঠিকাদার ফোরাম। গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সম্মিলিত ঠিকাদার ফোরামের সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, ৯ মাসের ব্যবধানে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে ৩৫-৪০ শতাংশ। চট্টগ্রামে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। তিন হাজার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব প্রকল্পের কাজ করছে। রড, সিমেন্টসহ অন্য নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে এসবের অধিকাংশ এখন বন্ধ হওয়ার পথে।
আসাদুজ্জামান টিটু আরও বলেন, ৯ মাস ধরে পর্যায়ক্রমে ইট, রড-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করেছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। গত দুই মাসে নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। একই সময়ে ৩৫-৪০ শতাংশ বেড়েছে ইলেকট্রনিকস, হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি পণ্যের দাম। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাড়তি দামে নির্মাণসামগ্রী কিনে চলমান কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে নির্মাণশ্রমিকের দৈনিক মজুরি। বর্তমানে একজন শ্রমিকের মজুরি ৮০০ টাকা। এক টন রডের দাম ৫০ হাজার থেকে ৯১ হাজার টাকা হয়েছে। আমদানি করা ৩৪ হাজার টাকার পাথরের টন এখন ৫১ হাজার টাকা। এভাবে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো বিভাগের রেট রিশিডিউল করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত ঠিকাদার ফোরামের আহ্বায়ক গোলাম মুর্তজা টুটুল বলেন, আগে নির্মাণকাজে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানির উৎপাদিত বিটুমিন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বিদেশ থেকে বিটুমিন আমদানিকারকদের কারসাজির কারণে দেশি বিটুমিনের সরবরাহ চাহিদার বিপরীতে কমে গেছে। ফলে বাজারে সংকট দেখিয়ে প্রতি ড্রাম বিটুমিন বিক্রি করা হচ্ছে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকায়। এতে ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু কাজের রেট পরিবর্তন করা হয়নি।
এ সময় এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন সুফল ছাড়া আলী হোসেন, জসিম উদ্দিন, আবু ফরহাদ শাবু, মহসিন হায়দার, নজরুল ইসলাম, সালাউদ্দিন লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানান চট্টগ্রাম এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, জনস্বাস্থ্য এইচইডিসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদাররা।
দুপুরে নির্মাণসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের ‘রেট রিশিডিউল’ করার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মুমিনুল হকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সম্মিলিত ঠিকাদার ফোরাম।