নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ডাবের চাহিদা এখন দেশজুড়ে। খাল নদী বেষ্টিত এ উপজেলার মাটি নারিকেলগাছ রোপণের জন্য উপযুক্ত মাটি। তাই দেশের এক-তৃতীয়াংশ ডাবের ফলন হয় পিরোজপুরের নেছারাবাদে। এখানকার ডাবের পানি খুবই সুমিষ্ট হওয়ায় সারা দেশসহ রাজধানীতে এর চাহিদা অনেক। ডাব ব্যবসায় জড়িয়ে এ উপজেলার আনুমানিক পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের তথ্যমতে, উপজেলার স্থল ও নদীপথে এখান থেকে প্রতি মাসে তিন থেকে চার কোটি টাকার ডাব যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাঁরা জানান, এখানে ডাবের ব্যবসা সারা বছর চলে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার ডাব বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া স্থানীয় ভোক্তাদের চাহিদানুযায়ী খুচরা বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার।
জানা গেছে, বসতবাড়ির আশপাশে বিভিন্ন উঁচু জমিতে লাগানো হয় এসব নারিকেলগাছ। মৌসুমে এ পেশায় জড়িয়ে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান ঘটছে। তবে এ পেশায় দিন দিন ব্যবসায়ীদের কপাল খুললেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে না কৃষকদের। কৃষকদের দাবি ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে একটি ডাব কিনছেন বিশ থেকে পঁচিশ টাকায়। যে কারণে উপজেলায় এখনো বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল গাছ রোপণ করছেন না।
উপজেলার ডাব ব্যবসায়ী মো. আসলাম বলেন, একটি ডাব এখানকার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়, ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর সেই ডাবটি ঢাকার খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। কিন্তু ১টি নারকেল বিক্রি হয় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। তাই নারকেলের চেয়ে ডাবের চাহিদা বেশি।
ডাব ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, আমি ১৫ থেকে ১৮ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন ডাবের চাহিদা অনেক বেশি। সিজনের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বিভিন্ন গ্রাম থেকে গৃহস্থদের কাছ থেকে গাছ কিনে থাকি। সিজন শুরু হলেই ডাব কাটা শুরু করি। লেবার খরচ, গাড়ি ভাড়া বাদে এ ব্যবসায় ভালোই লাভ হচ্ছে। তা ছাড়া উপজেলার ডাবের প্রচুর পরিমাণ পানি ও এর স্বাদ মিষ্টি হওয়ায় চাহিদা বেশি।
ডাব ব্যবসায়ী বাদল মিয়া বলেন, নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০০ জন ক্ষুদ্র সাব ব্যবসায়ী আছেন। এই ছোট ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে ডাব কেনেন। সেই ডাব তারা পাইকারি ক্রয় করে ঢাকায় পাঠান। অল্প পুঁজিতে এ ব্যবসা মোটামুটি লাভজনক হওয়ায় গ্রীষ্মকালে দুই শতাধিক সিজনাল ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসায় নতুন করে যুক্ত হন।
নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, ডাবে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। এ ছাড়া ডাবের পানির অসংখ্য গুণাগুণ রয়েছে। যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাৎক্ষণিক ক্লান্তি দুর করতে ডাবের বিকল্প নেই। তবে খালি পেটে ডাবের পানি পান না করাই ভালো।
নেছারাবাদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, উপজেলায় নারিকেলের ফলন খুব ভালো। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছি। এই উপজেলায় অনেক মানসম্পন্ন নার্সারি থাকায় কৃষকেরা স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের নারিকেলের চারা পেয়ে থাকেন।