মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২০ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া সেই অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল বছর তিনেক আগে। সেই অনুসন্ধান এখনো চলমান।
ডা. সাবরিনা কিংবা এনায়েত উল্লাহর মতো আরও অনেকের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে বছরের পর বছর। কবে সেই অনুসন্ধান শেষ হবে, সে ব্যাপারে সন্তোষজনক জবাব নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছেও। অথচ দুদক আইনে ৭৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। শুধু অনুসন্ধান নয়, তদন্তে ধীরগতির কারণেও ঝুলে আছে দুদকের অনেক মামলা। আইন অনুযায়ী, ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। এদিকে সময়মতো অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ না হওয়ায় দুদকে অভিযোগ ও মামলার সারি দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবলের অভাবে ঠিক সময়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে পারছে না দুদক। করোনার কারণে এসব কাজে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। কিছুদিন পর নতুন জনবল নিয়োগ হলে এসব সংকট কাটিয়ে কাজে গতি ফেরানো যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে একেকজন কর্মকর্তার হাতে গড়ে কমপক্ষে ২০টি করে অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব রয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্তেও সময় দিতে হচ্ছে সেই কর্মকর্তাদের। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন অনুসন্ধান। একটিতে গুরুত্ব দিতে গেলে অন্যটির কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ২২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এর পাশাপাশি আরও ১৬টি মামলার তদন্তও করছেন তিনি। তাঁর মতো কাজের চাপ অন্য কর্মকর্তাদের ওপরও রয়েছে। আরেকজন কর্মকর্তা বললেন, অতিরিক্ত কাজের কারণে একটিতে গুরুত্ব দিতে গেলে আগের অনুসন্ধানের প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়ে যায়। তখন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিতে হয়।
এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বল্পতার কারণে বেশি অনুসন্ধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দুদক একটি বড় নিয়োগের কাজ শেষ করেছে। এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে দুদকের কর্মতৎপরতা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনুসন্ধান শেষ না হওয়ার দুটো কারণ থাকতে পারে। একটি কারণ হলো দক্ষ জনবলের অভাব। অন্যটি রাজনৈতিক চাপ। তা নিয়ে দুদকের মাঝে একধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে যায়।
লোকবলের সংকটের বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে জনবল আছে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগালে বর্তমান পরিস্থিতি অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। দুদকে যেসব অভিযোগ আসে, তা একটি নিয়ম কাঠামোর মধ্যে এনে গুরুত্ব বিবেচনা করে বণ্টন করা গেলে সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।